করোনার জেরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মানুষেরা কেমন আছেন! দমদমের বাসিন্দা রক্তিম জার্মানির হ্যানোভার শহরে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে পোস্ট ডক্টরেট করছেন। রক্তিম জানান , ‘মার্চের শুরুতে যখন জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা একশ ছাড়াল তখনও এদেশে কোনও হেলদোল লক্ষ্য করা যায়নি । এশিয়ানদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও শুনতে পাওয়া গেল যে, এরা ফ্লু-এর ভয়ে মুখোস এঁটে বাড়িতে বসে থাকে। হঠাৎ ইতালিতে মৃত্যুমিছিল চালু হল। অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙল জার্মান প্রশাসনের”। এপ্রিলে কলকাতায় বাড়ি ফেরার কথা ছিল তরুণ এই গবেষকের। কিন্তু লকডাউনে তা আর হল না। তাঁর আশঙ্কা, ‘দুর্গাপুজোতেও ফিরতে পারব কিনা জানি না।’
লোকডাউন ঘোষণার দিন রাতেই ছুটেছিলেন বাজারে, মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান কিনতে। সব ততক্ষনে শেষ। বাড়ির পরামর্শে এক মাসের চাল ডাল, কেক, বিস্কুট এসব আগেই কেনা ছিল। কাজের চাপে প্রথম সপ্তাহের এই আকস্মিক ছুটি ভালোই লাগছিল। নিজের ঘরে আপন মনে গবেষণার কাজ করা । সময়ের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
রক্তিম আরও জানান, ‘আসলে এর প্রায় দশগুণ, যা এক সপ্তাহের পরে ধরা পড়ল। তবে ইউনিভার্সিটি, বাস-ট্রাম কিছুই অফিসিয়ালি বন্ধ হল না। আমাদের হল ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। বাড়িতে সবাই বলল অনেক হয়েছে, ফিরে আয়। গেলাম না। কারণ বিমানে আক্রান্ত হয়ে এয়ারপোর্টে করোনা পজিটিভ হলে সেটা আমার বাড়ির লোকেদের জন্য খুব একটা ভাল হবে না।’
অন্যদিকে, সল্টলেকের CL ব্লকের বাসিন্দা সন্দীপ সেন, স্বাতী সেন। এই দুই বৃদ্ধ দম্পতি মেক্সিকো গিয়েছিলেন বেড়াতে । মার্চের শেষ সপ্তাহে ফেরার কথা ছিল। আচমকা লকডাউনের ঘোষণা, মেক্সিকোয় আটকে পড়া। মেক্সিকোয় বসে সন্দীপবাবু জানিয়েছেন, “ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য সরকারকে ই-মেল মারফত জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাইনি। এখন এদেশের সরকার বলছে, বিদেশিরা যত দ্রুত সম্ভব দেশ ছাড়ুক। অন্যদিকে, আমেরিকাও বলছে, তাদের দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার পর যেটুকু বিমান পরিষেবা চালু আছে, সেটুকুও বন্ধ দেওয়া হবে”।
সে দেশের সরকার চাইছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশি পর্যটকদের দায়দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে। এমতাবস্থায় সুদূর মেক্সিকোয় দিন কাটছে সল্টলেকের দুই প্রবীণের। সঙ্গী বলতে একজনের ৬৪ বছরের স্ত্রী। আরেকজনের ৬৮ বছরের স্বামী। যদি এমন অবস্থা হবে জানতেন, তবে মেক্সিকোমুখো হতেন না কখনও।