করোনা মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গোটা দেশজুড়ে চলছে একটানা লকডাউন। আর তার ওপর বিশ্ব ব্যাঙ্ক হুঁশিয়ারি দিয়েছে, লকডাউন চলাকালীন ভিনরাজ্যের শ্রমিকেরা ঘরে ফিরলে ভারতের সমস্ত প্রান্তে দাবানলের মতো করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতেই মহাসমস্যায় পড়েছেন ওঁরা। লকডাউনের ফলে হারিয়েছেন কাজ। টান পড়েছে পকেটে। ফুরিয়ে এসেছে বেঁচে থাকার রসদটুকু। যদিও দিল্লী সরকার ঘোষণা করেছিল, যাঁদের রেশন কার্ড নেই, নিখরচায় রেশনে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে তাঁদেরও। কিন্তু তা পেতে গিয়ে হয়রান হামিদুল ইসলাম, নয়ন কুমার, মহম্মদ ইউসুফদের মতো কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। কারণ, রেশন পেতে রেজিস্ট্রেশনের জন্য দিল্লী সরকারের ওয়েবসাইটে ঢুকলেই ‘এরর’ দেখাচ্ছে। কাজেই তাঁরা রেশনের ই-কুপন সংগ্রহ করতেও পারছেন না। এমনকী প্রশাসনের বিলি করা ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়ার পাঁচদিন পরেও কোনও রেশন সামগ্রী পাননি, এমনই অভিযোগও করলেন ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা।
দক্ষিণ দিল্লীর শাহপুর জাট। এখানে পোশাক শিল্পে কাজ করেন কয়েক হাজার বাঙালি শ্রমিক। কেউ জরির কাজ, কেউ সেলাই, কেউ বা ডিজাইন আর্টের কাজ করেন। এঁদের অধিকাংশই হাওড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ ও মালদার বাসিন্দা। পেটের টান, আর সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আনতে অনেকে কৈশোরেই পাড়ি জমান রাজধানীতে। করোনার অতিমারীতে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। ঘরে যা খাবার রয়েছে, তা খুব বেশি হলে দু’দিন চলবে। তারপরে কী হবে? চিন্তায় ওঁরা। কারখানার মালিক বকেয়া টাকা দেননি। এক মাসের বাড়িভাড়া বাকি। বাড়ির মালিক তাগাদা দিচ্ছেন ভাড়ার জন্য। বাড়িতে টাকা পাঠানো দূরঅস্ত, কীভাবে আগামী দিনগুলি কাটবে, বুঝে উঠতে পারছেন না হামিদুল ইসলাম, আসাদুল হক, সামিম আহমেদ, মলয় ঘড়ারা।
উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের প্রান্তিক জনপদ থেকে বছর পাঁচেক আগে কাজের খোঁজে দিল্লীতে আসেন হামিদুল ইসলাম। হ্যান্ড এমব্রয়ডারির কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘কেশপুর এলাকার প্রায় তিনশো শ্রমিক এখানে আছেন। যাঁদের অধিকাংশই দিনমজুর। এখন টাকার জন্য ফোন করলে, কারখানার মালিক ফোনই তুলছেন না। হাতে যা টাকা ছিল, গত কুড়ি দিনে সব শেষ। এখন কীভাবে চলবে, বুঝতে পারছি না। রেশন সামগ্রী বিতরণ কেন্দ্রে ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে পুলিশের লাঠি খেয়েছি।’ আবার পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘার বাসিন্দা নয়ন কুমার। ডিজাইন আর্টিস্ট। দিল্লীর ছতরপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘লকডাউনের জেরে কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ। চার-পাঁচ দিন ধরেই রেশনের ই-কুপনের জন্য অনলাইনে আবেদন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনওভাবেই সম্ভব হয়নি। আমি নিজে প্রশাসনের দেওয়া ফর্ম পূরণ করেছি। কিন্তু পাঁচদিন পরও রেশন পাইনি।’
প্রশ্ন উঠছে দিল্লী সরকারের অব্যবস্থা নিয়ে। ৪ এপ্রিল দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা করেছিলেন, লকডাউনের সময় কোনও মানুষ অভুক্ত অবস্থায় থাকবেন না। তার জন্য রেশন কার্ড না থাকলেও রেশন মিলবে। দেওয়া হবে ৪ কেজি ময়দা, ১ কেজি চাল। তবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অভিযোগ, গত ৭ দিনে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢুকে অনলাইনে আবেদন করতেই পারেননি অনেকে। বরং লক্ষ করেছেন স্ক্রিনে লেখা ‘সার্ভার আন্ডার হেভি লোড! প্লিজ চেক আফটার সামটাইম।’ যদিও এখন সচল হয়েছে ওয়েবসাইটটি। প্রশ্ন উঠছে, যাঁদের অক্ষরজ্ঞান সামান্য, তাঁরা কীভাবে অনলাইনে আবেদন করবেন? যেখানে সাইবার কাফেগুলিও বন্ধ। এদিকে অনলাইন আবেদনে ভোটার কার্ডের স্ক্যান কপি, পরিবারের সদস্যদের আধার নম্বর, ছবি জমা করতেই হবে।