করোনা মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গোটা দেশ জুড়ে চলছে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন। এই পরিস্থিতিতে আগেই দেশের প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক বিপর্যয় সামাল দিতে ১০টি নিদান দিয়েছিলেন দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এবার কোন কোন বিষয়ে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা নিয়ে এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটে চিদম্বরম লিখেছেন, সরকারের হাতে অনেক উপায় আছে। সদিচ্ছা থাকলেই গরিবের পেটে ভাত জুটবে।
করোনার মোকাবিলায় তাঁর প্রথম পরামর্শ, পরীক্ষার হার বাড়ানো প্রয়োজন। শুধুই লকডাউন দিয়ে কাজ হবে না। যত বেশি পরীক্ষা করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি আক্রান্তের হদিশ মিলবে। দ্রুত চিকিৎসা করে তাঁদের রোগমুক্ত করা যাবে। সংক্রমণের হারও কমবে। আর লকডাউনের সময়ে গরিব-দিনমজুররা কীভাবে খেয়ে-পরে বাঁচবে, সংসার কীভাবে চালাবে, সে নিয়ে সরকারকেই ভাবতে হবে। গরিব ও মধ্যবিত্তের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগান কীভাবে বাড়ানো যাবে, সেটাও দেখা প্রয়োজন। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, পরিস্থিতির চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ঠিকই, কিন্তু বহু মানুষের কাছে সেই সাহায্য পৌঁছচ্ছে না। যেমন পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
দেশের ২৬ কোটি গরিব পরিবারের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ যদি আর্থিক সাহায্য পায়, তাহলেও অনেক উপকার হবে। বলছেন চিদম্বরম। তাঁর প্রস্তাব, একটিই তালিকা তৈরি হোক। যাঁরা সরকারি ‘উজালা’ প্রকল্পের আওতায় আছেন, তাঁদের ‘জন ধন’ প্রকল্পের তালিকায় আনা হোক। ‘জন আরোগ্য আয়ুষ্মান ভারত’ যোজনার আওতায় যাঁরা, তাঁদেরও নাম নথিভুক্ত করে একটিই নতুন তালিকা তৈরি করুক সরকার। রাজ্যগুলির বিপিএল তালিকাভুক্তদেরও সেই নতুন তালিকায় নিয়ে আসা হোক। এঁদের মধ্যে গ্রামের গরিবদের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর থেকে আর্থিক সুযোগ সুবিধা চালু করা হোক। আদিবাসীদের জন্যেও একটি তালিকা তৈরি করে আর্থিক সাহায্য দিক সরকার।
চিদম্বরমের পরামর্শ, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে রাজ্যভিত্তিক আলাদা তালিকা তৈরি করলে গোটা কাজটা সহজ হবে। দিন পাঁচেকের বেশি সময় লাগবে না। তারপর ১৪ তারিখ আবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলুন, ‘দেশের প্রত্যেকটি গরিব পরিবারের ঘরে ঘরে মাসে পাঁচ হাজার টাকা পৌঁছে যাবে।’ রাহুল গান্ধীর হুঁশিয়ারিতে কেন্দ্র সরকার কান দেয়নি বলেও নিজের ক্ষোভ জানিয়েছেন চিদম্বরম। মাস দুয়েক আগেই রাহুল বলেছিলেন, চীন-ইউরোপের পর ভারতেও পড়বে করোনার কালো ছায়া। সরকারের উচিত, এখনই পদক্ষেপ নেওয়া। চিদম্বরমের আফশোস, সরকারের হাতে অনেক সময় ছিল। করোনা দেশে ঢোকার আগেই আটকে দেওয়া যেত। কিন্তু তখন রাহুলের কথায় আমল দেয়নি মোদী সরকার।