বয়স আশির কোটায়। তাঁরই এখন সাহায্যের প্রয়োজন। কিন্তু সেই তিনিই কিনা এবার করোনা মোকাবিলায় দান করলেন ১০ হাজার টাকা! হ্যাঁ, এবার এক অশীতিপর বৃদ্ধের এমনই এক কাণ্ডে কার্যত হতচকিত হয়ে গিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
জানা গিয়েছে, নিয়মমতো টহল দিচ্ছিল পুলিশের গাড়ি। আচমকাই জানলা দিয়ে পুলিশকে ডাকেন ওই বৃদ্ধ। তিনি নিশ্চয়ই কোনও বিপদে পড়েছেন, তাই সাহায্য চাইছেন – এমনটা ভেবেই শশব্যস্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে যান পুলিশকর্তারা। কিন্তু তাঁরা দেখেন সাহায্য চাইতে নয়, সাহায্য করতে পুলিশদের ডেকেছেন বৃদ্ধ। কাঁপা হাতে তাঁদের দিকে ১০ হাজার টাকার চেক এগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এরপরেই বিস্ময় আর মুগ্ধতার যুগপৎ সমাপতনে কার্যত স্থির হয়ে যান তাঁরা। ৮২ বছরের এই প্রাক্তন অধ্যাপকের এই অপার মহত্বের কথা এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল।
প্রসঙ্গত, সুভাষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামের এই বৃদ্ধের বাস দমদম এয়ারপোর্টের কাছে। তাঁর জীবনধারণের প্রয়োজনীয়টুকু আসে পেনশন থেকে। বাকিটা জমে সামান্যই। সেই তিনিই কিনা পুলিশদের গাড়ি থামিয়ে, তাঁদের বাড়ির ভিতরে ডাকেন। এবং জানান, এখুনি তাঁর কোনও সাহায্যের প্রয়োজন নেই। কিন্তু তিনি রাজ্য সরকারের করোনা মোকাবিলা ফান্ডে কিছু অর্থ সাহায্য করতে চান। তখনই উপরতলার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশকর্মীরা। সম্মতি আসে দান গ্রহণের। ১৯৯৮ সালে দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়া মানুষটি কাঁপা হাতে ১০ হাজার টাকার চেক লিখে এগিয়ে দেন পুলিশের দিকে।
এ প্রসঙ্গে বিধাননগর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘আমরা সত্যিই প্রথমে ভেবেছিলাম, উনি সাহায্য চাইছেন। তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাই এত বয়স্ক মানুষকে জানলা দিয়ে হাত নাড়তে দেখে। কিন্তু তার পরেই আমাদের অবাক হওয়ার পালা।’ তাঁর কথায়, ‘আমরা আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম এই কাজ দেখে। কিন্তু উল্টে উনি আমাদের বলেন, যে উনি আমাদের ডেকে এনেছেন বলে আর অনলাইন লেনদেন করতে পারেন না বলে উনি দুঃখিত। এই সৌজন্য ও বদান্যতা ভাবা যায় না আজকের দিনে।’
অন্যদিকে, বৃদ্ধ সুভাষবাবুর কথায়, ‘সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। এই মহামারী কালে কিছুই করতে পারছি না, এটাও আমার অস্বস্তির কারণ। আমি উপায় খুঁজছিলাম অর্থসাহায্য করার। এটুকুই আমার পক্ষে সম্ভব। কিন্তু আমি সশরীরে যেতে পারতাম না। তাই পুলিশদের দেখতে পেয়ে ডেকে নিই। আরও কিছু দেওয়ার ইচ্ছে ছিল আমার। কিন্তু ওষুধ আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই সব বেরিয়ে যায়।’