দেশজুড়ে চলতে থাকা টানা লকডাউনের জেরে এবার সঙ্কটে চাষীরা। একে পরিবহণের সঙ্কট। তার ওপর সময় মতো বাজারে না পৌঁছতে পারলে আড়তদাররা কিনছেন না সবজি। সঙ্গে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা-র মতো রয়েছে ফড়েদের উৎপাত। আর এসবের জাঁতাকলে পড়ে নিজেদের ফসলের দাম পাচ্ছেন না বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের সোনাইচণ্ডীপুর চর মানার সবজি চাষীরা। লোকসানের আশঙ্কায় মাঠেই পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হচ্ছে সোনার ফসল। খাওয়ানো হচ্ছে ছাগল-গরুকে।
বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার একেবারে সীমানায় রয়েছে দামোদর নদ। এই নদের মাঝেই মেজিয়া ব্লকের জেগে থাকা একটি চরে আজ থেকে বছর কুড়ি আগে বসতি শুরু করে গলসি, নদিয়া, সোনামুখী এলাকা থেকে এই এলাকায় আসা কিছু মানুষ। নদীর চরে উর্বর প্রায় দুশো একর জমিতে শুরু হয় চাষাবাদ। সারা বছর এখানে সবজি চাষ হয়। এলাকাটি নদী দ্বারা বাঁকুড়া জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখানে উৎপাদিত সবজির সিংহভাগ চলে যায় পশ্চিম বর্ধমান জেলায়। মূলত, দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজার ও সেন মার্কেটে সবজি সরবরাহ করেন এখানকার কৃষকরা। কিন্তু হঠাৎ করে লকডাউনের জেরে এখন চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।
এমনিতে লকডাউনের জেরে পরিবহণের সমস্যা রয়েছে। তাই প্রায়শই সময়মতো পৌঁছনো যাচ্ছে না বাজারে। সকালের দিকে ঘণ্টা দুয়েক খোলা থাকা দুর্গাপুরের পাইকারি সবজি বাজারে সময়মতো পৌঁছতে না পারলে বিক্রি হচ্ছে না উৎপাদিত ফসল। এর ওপর রয়েছে ফড়েদের দাপট। তার সঙ্গে পুলিশি হয়রানি। খুচরো বাজারে এখন সবজির দর কিলো প্রতি কুড়ি থেকে তিরিশ টাকার মধ্যে থাকলেও ফড়েরা কৃষকদের কাছ সমস্ত সবজির দাম দিচ্ছে কিলো প্রতি তিন থেকে চার টাকা। ফলে উৎপাদন খরচ বাদ দিলেও মাঠ থেকে সবজি তুলে তা বাজারজাত করার পরিবহণ খরচও হাতে আসছে না সোনাইচণ্ডীপুরের কৃষকদের।
এর ফলে আরও বেশি লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে মাঠ থেকেই সবজি তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন ওই এলাকার সমস্ত কৃষক। মাঠেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো, বেগুন, কুমড়ো, গাজর, মুলো, সিম-সহ বিভিন্ন সবজি। সোনাইচণ্ডীপুর চর মানায় উৎপাদিত এই সবজি সঠিক দামে কিনে সুফল বাংলার মাধ্যমে বিক্রি ও বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া ত্রাণের কাজে লাগানোর আশ্বাস দিয়েছে বাঁকুড়া জেলা পরিষদ। এখন দেখার, প্রশাসনের আশ্বাসে কবে সুদিন ফেরে কৃষকদের।