করোনা মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গত ২৫ মার্চ থেকে গোটা দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ২১ দিনের লকডাউন। কিন্তু দেশে করোনার হানার আগে কাজের খোঁজে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন মালদার কালিয়াচকের মহম্মদ সেলিম আখতার। এখন লকডাউনে আটকে পড়ে দু’বেলা ঠিক মতো খাবার জুটছে না তাঁর। সরকারি ব্যবস্থায় রয়েছেন কিন্তু সেখানে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। এক কম্বলের নীচে শুতে হচ্ছে তিন-চার জনকে। এক ঘরে থাকছেন ২০ জনের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক।
আবার খিদের কষ্ট আর সংক্রমণের ভয় নিয়েই উত্তর কাশ্মীরের ক্যাম্পে দিন কাটাচ্ছেন বাঁকুড়ার সুরেশ কুমার। টাকা যা ছিল, সব শেষ। ঠাসাঠাসি করে ক্যাম্পে থাকা ছাড়া গতি নেই। শ্রীনগরে ভাড়াবাড়িতে দিন কাটছে মুর্শিদাবাদের মহম্মদ তাহিরের। কত দিন ভাড়া গুনতে পারবেন, জানেন না। এ রকম বহু বাঙালি শ্রমিক কাশ্মীরে আটকে। সকলেরই আর্তি, রাজ্য সরকার তাঁদের ফেরানোর একটা ব্যবস্থা করুক। তাঁরা চেয়ে রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দিকে।
গোটা জম্মু-কাশ্মীর ধরলে প্রায় ৫০ হাজার ভিন রাজ্যের শ্রমিক আটকে রয়েছেন। এর মধ্যে কাশ্মীরেই আটক ২০ হাজার। আগস্টে ৩৭০ রদ হওয়ার পর একরকম লকডাউনেই ছিল কাশ্মীর। তখন কেউ কেউ ফিরেছিলেন নিজের রাজ্যে। আবার পরের দিকে একটু একটু করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ফের কাজের খোঁজে কাশ্মীরে চলে যান বহু। কয়েক মাসের মধ্যেই আবার লকডাউন। এ বার সঙ্গী সংক্রমণের ভয়। প্রাণের ভয়।
পুলওয়ামার লসিপোরায় একটি ক্যাম্পে রয়েছেন আখতার। এর আগে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। সরকারি ক্যাম্পে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। তিনি বলেন, ‘একটা ঘরে একসঙ্গে কুড়ি জন থাকি। সরকার বলছে, দূরে দূরে থাকতে। এখানে সে সুযোগ কই!’ তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘রোজ দুপুরের খাবার আসতে আসতে তিনটে বেজে যায়। সকাল থেকে কিছুই পেটে পড়ে না!’
লকডাউনের আগে বাড়ির ফেরার জন্য তিন দিন সময় পেয়েছিলেন সুরেশ। কিন্তু সুযোগ হয়নি। এখন কার্যত বন্দী। বলেন, ‘এখানে সব মিলিয়ে ৪০০ জন এক জায়গায় রয়েছি। জায়গাটা রোজ পরিষ্কারও হয় না। অসুস্থ না-হয়ে পড়ি! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেরার একটা ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। না হলে কী হবে, জানি না!’
শীতের পর পরই কাশ্মীরে বিভিন্ন রাজ্য থেকে শ্রমিকরা আসতে শুরু করেন। বিশেষ করে বাংলা, বিহার, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের শ্রমিকরা ভিড় করেন। সরকারি হিসেবে সংখ্যাটা প্রায় চার লাখ। লসিপোরায় সুরেশের সঙ্গে থাকা বিহারের সাপুলের বাসিন্দা মহম্মদ হানিফ বলেন, ‘এ বার ভেবেছিলাম, ভালো আয় হবে। এখন তো সারাক্ষণ মৃত্যুর ভয় লাগছে!’ হানিফের কাছে আর মাত্র ৬০ টাকা পড়ে আছে। ১১ বছর ধরে কাশ্মীরের নানা জায়গায় রাজমিস্ত্রির কাজ করা হানিফ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আগে খিদেতেই মরে যাব আমরা।’