মহামারির জেরে মড়ক লেগেছে বিশ্বে। উপরন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও টালমাটাল। বন্ধ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি। তলানিতে ঠেকেছে চাহিদাও। কাজ হারিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে লক্ষ-লক্ষ ঠিকা শ্রমিককে। এরফলে এক ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা বিশ্বের অর্থনীতির উপর তীব্র প্রভাব ফেলতে পারে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হতে চলেছে বেকারত্ব।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বলছে, করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে ৩৩০ কোটি মানুষ কাজ হারাতে পারেন। দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যেতে পারেন অন্তত ৪০ কোটি ভারতীয়। তাঁদের আশঙ্কা, ২০০৮-২০০৯ সালের আর্থিক সংকটের চেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি হতে পারে।
গত বছর ডিসেম্বরে আড়াই কোটি মানুষের নতুন করে বেকার হয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএলও। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সেই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বিশ্ব শ্রম সংস্থাটি। তাঁদের কথায়, করোনার তাণ্ডবে শুধু ২০২০ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সারা বিশ্বে ৬.৭% কাজের সময় নষ্ট হবে। যা ১৯.৫ কোটি পূর্ণ সময়ের কর্মীর কাজ খোয়ানোর শামিল। যার মধ্যে আরব দুনিয়ায় এই সংখ্যা ৫০ লক্ষ, ইউরোপে ১.২ কোটি আর এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে আকাশছোঁয়া, ১২.৫ কোটি। আর এই আঁচ সব থেকে বেশি অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আইএলও। তবে ব্যাপক প্রভাব পড়বে সংগঠিত ক্ষেত্রেও। আইএলও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিশ্বব্যাপী সাড়ে ৩৩০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
করোনার সংক্রমণ এড়াতে কোথাও লকডাউন তো কোথাও আবার শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ছোঁয়াচ এড়াতে জরুরিক্ষেত্র ছাড়া তালা পড়েছে বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে। মানুষের হাতে নগদের জোগান কম। ফলে কেনাকাটি চাহিদাও কমেছে। সবমিলিয়ে প্রায় স্তব্ধ আর্থিক লেনদেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের এই সংস্থা বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন সংকট আর দেখা দেয়নি। তবে বছরের শেষ ৬ মাসে অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারকে কার্যকর নীতিকৌশল অবলম্বন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির শীর্ষকর্তা গাই রাইডার বলেছেন, “উন্নত ও উন্নয়নশীল, দুই ধরনের দেশেই এ সংকট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”