একেকটা সঙ্কট মানুষের ভিতর থেকে জাগিয়ে তোলে প্রকৃত মানুষকে। যেমন ১৮৯৯ এর প্লেগের মহামারিতে মানুষ দেখেছে সিস্টার নিবেদিতার প্রাণপাত সেবাধর্মের চেহারা। আবার ২০২০-র করোনা বিধ্বস্ত সময়ে আমরা দেখছি সেই সেবাধর্ম পালনেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম। এই শহর ভাগ্যবান যে সে দুটি ঐতিহাসিক সময়ে মহামারি দমনে দু’জন অসামান্যা নারীর কর্মযজ্ঞে সাক্ষী হয়ে রইলো। মানবধর্ম পালনে এই দুজনের কেউই নিজের বিপদের দিকে তাকান নি।
কলকাতায় প্লেগের সময় সিস্টার নিবেদিতার রোগীদের সেবা করার ঘটনা আমি বইয়ে পড়েছি। মিশনের মহারাজদের কাছ থেকেও শুনেছি। নিজের অন্তরাত্মার নির্দেশে তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে রোগীদের পাশে থেকেছেন। আর এখন দেখছি করোনা মোকাবিলায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিনরাত একাকার করা পরিশ্রম। মানবধর্ম তাকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। করোনার মত এক ভয়ঙ্কর ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি।
যতদূর জানি প্লেগের সময়ে সিস্টার নিবেদিতাকে অনেক অপমান, গঞ্জনা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। অবস্থা এখনও বদলায়নি, দিনরাত পরিশ্রমের পরেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। শুধু আজকে নয়, সাংবাদিক হিসেবে আমি দেখেছি এসব গায়ে না মেখে, দিনে রাতে যে কোন সময়ে মানুষের আপদে বিপদে তিনি নিজের জীবন তুচ্ছ করে কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন। করোনা বিধ্বস্ত এই সময়ে শহরের রাজপথে আমিও পেশার সুবাদেই রয়েছি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের সাধ্যমত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। দেখছি মুখ্যমন্ত্রীর কর্মযজ্ঞ, এই অভিজ্ঞতা আমার সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।
বিরোধিতা যেন মুখ্যমন্ত্রীর চিরসঙ্গী। তার নানা কাজের বিরোধিতা হয়। কিন্তু দিনের শেষে তিনিই জিতে যান। যেভাবে এই পর্বেও করোনা মোকাবিলায় তিনি প্রতিদিন অফিসে আসছেন। ডাক্তার ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন আবার বিকেলের দিকে সাধারণ মানুষ, বাজার, পথ-ঘাটে ঘুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। ইতিমধ্যেই কলকাতা সংলগ্ন প্রতিটি হাসপাতালে গিয়ে সেখানকার অবস্থা কিরকম তার খোঁজ নিয়েছেন তিনি, দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশ।
সিস্টার নিবেদিতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কেন তুলনায় গেলাম সেটা ইতিহাস বলবে। তবে একটা কথা বলতে পারি, তার খুঁত খুঁজতে ব্যস্ত বিরোধীরা কোনদিনই তার আন্তরিকতা ও কাজের সামনে দাঁড়াতে পারবেন না। একদিন নিজেদের ভুল বুঝতে পারবেন তারা। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। কারণ, তখন তাদের আর কোন রাজনৈতিক অস্তিত্বই থাকবে না।
কলকাতার রাস্তায় তিনি যেভাবে নিজের হাতে ইট ভেঙে গণ্ডি কেটে সাধারণ মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বোঝালেন তাতে আমার মনে পড়ে গেল প্লেগের সময় সিস্টার নিবেদিতার ঝাঁটা হাতে করে উত্তর কলকাতার বিভিন্ন জায়গার রাস্তা পরিষ্কার করার কথা। বিরোধিতা, অসন্মান, অপমান তাকে এ কাজ থেকে বিরত করতে পারেনি।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও ঠিক একইভাবে কাজ করে চলেছেন। দেশের কোন মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আমি এভাবে কাজ করতে দেখিনি। এই করোনার সময়েও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা দেখবেন শুধু ভিডিও কনফারেন্স করে কাজের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। অথচ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের মন্ত্রীরা যে যার এলাকায় পথে নেমে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছেন। ইদানিং মুখ্যমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৪ তলা থেকে ১ তলা সাংবাদিক সন্মেলন করছেন। এটাও তিনি করছেন সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য। ভয় নয়, তিনি মানুষকে দিচ্ছেন সাহস।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষ জিতবেই। আর মানবধর্ম পালনের সুবাদে সিস্টার নিবেদিতার মত ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত