সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের সরকারি সমস্ত চেষ্টা, এমনকী দেশজোড়া লকডাউন সত্বেও ভারতে ক্রমশ বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকালে লাইভ ভিডিও বার্তায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, আগামী ৫ এপ্রিল, রবিবার রাত ৯ টায় ৯ মিনিট আপনারা ঘরের সব লাইট বন্ধ করে আপনারা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মোমবাতি, টর্চ বা মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালান। এতে দেশে মহাশক্তির জাগরণ হবে। তবে তা যে নিছক অনুরোধ ছিল না, তা স্পষ্ট হয়ে গেল গতকালই। প্রধানমন্ত্রীর কথা মেনে স্কুলের পড়ুয়ারা সত্যিই ঘরের আলো নিভিয়ে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালাচ্ছে কি না, তা নিয়ে নজরদারির অভিযোগ উঠল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে!
টুইটারে তৃণমূলের তরফে এক সাংসদ অভিযোগ করেন, রবিবার রাত ৯টায় ৯ মিনিটের জন্য বাড়ির আলো নিভিয়ে পড়ুয়ারা প্রদীপ কিংবা মোমের আলো হাতে তুলে ধরেছেন কি না, সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছিল সমস্ত স্কুলকে। এ জন্য ইন্টারনেট মারফত বাড়ি বাড়ি ফর্মও পাঠানো হয়েছে অনেক স্কুলের তরফে। ওই তৃণমূল সাংসদের কটাক্ষ, ‘সাবধান! বড়দা কিন্তু নজর রাখছেন!’ প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিও। আলো নিভিয়ে দীপ জ্বালানোর বার্তা ৩ এপ্রিলই পৌঁছেছিল সিবিএসই স্কুলগুলির প্রিন্সিপালদের কাছে।
তাঁদের পাঠানো চিঠিতে এই প্রতিকূল পরিস্থিতি যুঝতে প্রথমে ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপের কথা বলা হয়েছে। তার পরে এসেছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আয়ুষ মন্ত্রকের জারি করা আয়ুর্বেদিক টোটকার প্রসঙ্গ। আর ‘আসল কথাটি’ পাড়া হয়েছে শেষে। সেখানে লেখা, স্কুলের সমস্ত শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী এবং পড়ুয়ারা নিজের-নিজের বাড়িতে বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালাতে পারেন। চলবে মোবাইলের টর্চও। চিঠির বয়ানে ‘জ্বালাতে পারেন’ লেখা হলেও, যে ভাবে কেন্দ্র নজরদারির জন্য প্রতি বাড়ি থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে চাইছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই।
করোনার দাপটে ক্লাসঘরে তালা। কিন্তু তাতে যেন পড়ুয়াদের প্রদীপ জ্বালানোয় বাধা না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে শুধু স্কুল নয়, মোমবাতি কিংবা প্রদীপ জ্বালানোর ‘অনুরোধ’ এসে পৌঁছেছে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। যেমন, লকডাউনে হস্টেলে আটকে থাকা পড়ুয়াদের প্রদীপ কিংবা বাতি জ্বালানোর অনুরোধ জানিয়েছেন জেএনইউয়ের উপাচার্য এম জগদীশ কুমার। আলো জ্বালানোর যজ্ঞে পড়ুয়াদের শামিল হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমা আখতারও। তবে এ রাজ্যের যাদবপুর ও বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা তেমন কোনও নির্দেশ পাননি বলে জানিয়েছেন।