দেশবাসীর ওপর জিএসটি তো চাপিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। কিন্তু প্রতিশ্রুতি মত কোনও রাজ্যকেই ক্ষতিপূরণের টাকা মেটাচ্ছে না কেন্দ্র। এ নিয়ে বারবারই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দেখাদেখি সুর চড়িয়েছে অন্যান্য রাজ্যও। কিন্তু এতদিনেও সেই প্রাপ্য টাকা তো মেটানো হয়ইনি, বরং করোনা মোকাবিলায় রাজ্যগুলির সিন্দুকে যখন টান পড়েছে, তখনও মোদী সরকার তাদের বকেয়া পাওনা দিচ্ছে না বলে এবার সরব হলেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীরা। বাংলা-সহ রাজস্থান, পাঞ্জাব, কেরালা, পুদুচেরির মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় করের ভাগ ও জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যগুলির হাজার হাজার কোটি পাওনা আটকে রেখেছে কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। সেখানেই একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কেউ কেউ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সঙ্গেও কথা বলেন। বাংলা এবং আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীও সীতারমণকে চিঠি লেখেন। সকলেরই যুক্তি, করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে টাকা ঢালতে হচ্ছে। লকডাউনের ফলে রোজগার হারানো গরিব মানুষকে সুরাহা দিতেও টাকা খরচ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র বকেয়া পাওনা আটকে রাখলে রাজ্য সরকার কী ভাবে কাজ চালাবে?
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবারই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্যের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজের দাবি জানিয়েছিলেন। গতকাল রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের ১৭৭৫ কোটি টাকা কেন্দ্র এখনও মেটায়নি। এর মধ্যে অক্টোবর-নভেম্বরের বকেয়াও রয়েছে। এর পরে ফেব্রুয়ারি-মার্চের জন্যও প্রায় ১,১০০ কোটি টাকা পাওনা। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে প্রায় ২,৮৭৫ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। আবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দ্র সিংহ বলেছেন, কেন্দ্র এখনও পঞ্জাবের বকেয়া ৫ হাজার কোটি টাকা দেয়নি। ফলে করোনা-মোকাবিলায় কাজে সমস্যা হচ্ছে। তিনি অর্থমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন বলেও জানান ক্যাপ্টেন।
অন্যদিকে, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলার অভিযোগ, ‘কেন্দ্র জিএসটি ক্ষতিপূরণের ২ হাজার কোটি টাকা মেটায়নি। একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওনা বাকি। ৪০০ কোটির মধ্যে ৭৫ কোটি টাকা মিলেছে।’ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, ‘আমি ১০০ দিনের কাজের কর্মীদের কিছু দিনের আগাম মজুরি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি।’ পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামীও প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি করেছেন। কেরালার অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক জানিয়েছেন, ‘কেরালারও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা পাওনা। কেরালার মতো রাজ্যের জন্য এটা বিরাট অঙ্ক।’