রাজ্যের কেউ যাতে অভুক্ত না থাকে তার জন্য রেশন কার্ডহীন সমস্ত মানুষকেই পাঁচ কেজি করে চাল-গম দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নথিভুক্ত অথচ রেশন কার্ড নেই এমন প্রায় ১৬ লক্ষ রাজ্যবাসীর হাতে চাল-গম পৌঁছনোর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করল খাদ্যদপ্তর। করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে ছ’মাসের জন্য তৈরি হল রেশন কার্ডের বিকল্প নয়া ‘ফুড কুপন’। এর মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা পুরসভার ১৪৪ ওয়ার্ডেই ২ লক্ষ ৭৩ হাজার নথিভুক্ত প্রাপক রয়েছেন।
আজ ১ এপ্রিল, বুধবার থেকে চার শ্রেণির রেশন কার্ড প্রাপকদের বিনামূল্যে খাদ্য বণ্টন করবে রাজ্য সরকার। আগামী ১০ এপ্রিলের পর তালিকাভুক্ত ১৬ লক্ষ মানুষের হাতেই এই ফুড কুপন তুলে দেওয়া হবে। কলকাতার পাশাপাশি সমস্ত জেলাতেই এই কুপন দেখিয়ে রেশন দোকান থেকে বিনামূল্যে মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে চাল-গম পাওয়া যাবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এছাড়াও যাঁদের কোনও ধরনের রেশন কার্ড বা ফুড কুপনও নেই এমন অসহায়দের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ‘জিআর’ প্রকল্পে সমপরিমাণ চাল-গম দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রাজ্য খাদ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এই ১৬ লক্ষের বাইরেও ‘জিআর’ প্রকল্পে আরও চার-পাঁচ লক্ষ মানুষকে খাদ্য দেবে রাজ্য।
লকডাউনে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে আজ থেকে খাদ্যসাথী, রাজ্য খাদ্যসুরক্ষা যোজনা, অন্ত্যোদয় যোজনা-সহ চার শ্রেণির রেশন কার্ডেই বিনামূল্যে চাল ও গম দেবে রাজ্য সরকার। কিন্তু, সেই খাদ্য বন্টনের ক্ষেত্রেও করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। রেশন ডিলারের সমস্ত কর্মীকে হাত স্যানিটাইজ করে চাল ও গম দিতে হবে। এক মিটার দূরে দূরে দাঁড়াতে হবে খাদ্য নিতে আসা রেশন গ্রাহকদের। দোকানে ভিড় করা যাবে না। এক ঘণ্টায় ১০-১৫ জনের বেশি গ্রাহক আসবেন না। খাদ্য দপ্তর জানিয়েছে, সকাল আটটায় রেশন দোকান খুলবে, রাত দশটা পর্যন্ত খাদ্য বন্টন হবে। দুপুরে দু’ঘণ্টা শুধু বন্ধ থাকবে। সপ্তাহে সাতদিনই রেশন দোকান খুলে রাখবেন ডিলাররা। আর পাড়া ভাগ করে পৃথকভাবে রেশন বণ্টন করা হবে। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বণ্টনের গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে বলে জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী।
গোটা বিষয়টি নিয়ে এদিন খাদ্যভবনে বৈঠকে বসেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং খাদ্য দপ্তরের বণ্টন বিষয়ক শীর্ষকর্তারা। করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের কারণে স্পিডপোস্ট বন্ধ থাকায় নথিভুক্ত ‘আরকেএসওয়াই-২’ রেশন কার্ড পৌঁছচ্ছে না। কিন্তু, সমস্ত নথিভুক্তর জন্যই খাদ্যের সুবন্দোবস্ত করেছে রাজ্য সরকার। আরকেএসওয়াই-১ রেশন কার্ড যাঁদের আছে তাঁরাও চাল-গম পাবেন। তবে তাঁদের ১৩ টাকা কিলো চাল এবং ৯ টাকা কিলো দরে গম নিতে হবে রেশন থেকে। পরে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ গরিব মানুষকে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মাথাপিছু তিন কেজি গম এবং দু’কেজি চাল দেওয়া হবে। তবে যেদিনই ওই নতুন রেশন কার্ড হাতে এসে যাবে সেদিন থেকেই এই ফুড কুপন বাতিল হয়ে যাবে। এদিন ফের জ্যোতিপ্রিয় উল্লেখ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যে একজন মানুষও অভুক্ত থাকবেন না, প্রত্যেকের খাবারের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার।