বছরখানেক ধরে দেশের অর্থনীতিতে ঝিমুনি ভাব। বেকারত্ব মাথাচাড়া দিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের শঙ্কার মেঘ ছড়িয়েছে। এই অশনি সঙ্কেতের মধ্যে আমজনতার কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও বাড়িয়ে বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ বিপুল কমাল কেন্দ্র। সেভিংস অ্যাকাউন্ট ছাড়া সব প্রকল্পেই এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে সুদের হার ৭০ থেকে ১৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমল।
নতুন অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হার ঘোষণা করে কেন্দ্র। এক বছর থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদি আমানত, পাঁচ বছরের রেকারিং ডিপোজিট, সিনিয়র সিটিজ়েন সেভিংস স্কিম, মাসিক আয় প্রকল্প, এনএসসি, কেভিপি, পিপিএফ ও সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, সবগুলিরই সুদের হার এক ধাক্কায় কমছে। ফলে ধাক্কা খাবে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প নির্ভর প্রবীণদের আয়। কর বাঁচাতে বা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে পিপিএফে যে সব চাকরিজীবী টাকা রাখেন, তাঁদের সুদ বাবদ আয়েও টান পড়বে।
এ দিন ওই ঘোষণার আগেই অবশ্য অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক বিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তী ওই সব প্রকল্পে সুদের হার কমার ইঙ্গিত দেন। তিনি জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাচ্ছে। সরকারি ঋণপত্রে বিদেশিদের লগ্নির দরজাও খুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে স্বল্প সঞ্চয়ের সুদের হারকেও নীচের দিকে কমানোর জন্য চাপ পড়বে। প্রসঙ্গত, গত মাসে শীর্ষ ব্যাঙ্কও ব্যাঙ্কিং মহলের দাবি মতো ওই সঞ্চয়ে সুদের হার পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছিল।
আমজনতা বা প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এ দিনের সিদ্ধান্ত কঠিন হলেও অর্থমন্ত্রকের দাবি, তা সরকারে পক্ষে সাহসী পদক্ষেপ। কারণ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির দাবি ছিল, শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ ছাঁটলেও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের পক্ষে ঋণের সুদ ছাঁটাই সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ সে ক্ষেত্রে আমানতকারী বেশি সুদের জন্য স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের দিকে ঝুঁকতেন। অন্য দিকে, সরকার ঋণপত্র বাজারে ছেড়ে যে ঋণ নেয়, সে ক্ষেত্রেও সরকারের উপরে সুদের বোঝা বাড়লেও তারা তা কমাতে পারছিল না। এ ছাড়া গোপীনাথ কমিটিরও সুপারিশ ছিল, সরকারি ঋণপত্রের সুদের হারের সঙ্গে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হারও যেন কমানো হয়। কেন্দ্র তা মানবে বলে বাজেটের পরে ইঙ্গিত মিলেছিল।