রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই সচেষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে ২০০ কোটির ফান্ড থেকে সরকারি হাসপাতালে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ সবটাই নিজের হাতে দায়িত্ব নিয়ে করেছেন মমতা। সাংবাদিক সম্মেলন করে চালু করেছেন হেল্পলাইন নম্বর ও অ্যাকাউন্ট নম্বর। এসব দেখে মুগ্ধ হয়েই এবার মমতার সঙ্গে কথা বললেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দম্পতি অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার ডুফলো। দিলেন ভারতে করোনা মোকাবিলায় সচেতনতা বাড়াতে নয় দফা পরামর্শ। সেই সঙ্গে যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মজবুত করারও বার্তা দিলেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, এখন পশ্চিমবঙ্গে কোভিড-১৯ নিয়ে সচেতনতার প্রচারে যুক্ত আছেন অর্থনীতিবিদ দম্পতি। তারই মধ্যে কর্ণাটকে একটি সমীক্ষাও সেরে ফেলেছেন তাঁরা। সেখানে যে বিষয়গুলি তাঁদের নজরে এসেছে তা হল, এই লকডাউনের মধ্যে নোভেল করোনাভাইরাসের নিয়ে মানুষ ওয়াকিবহাল হলেও বেশিরভাগই জানেন না, এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে তাঁদের কী করণীয়। কোন কোন বিষয়ে লক্ষ রাখা উচিত। অভিজিৎ-এস্থারের মতে, ২১ দিনের লকডাউনের ফলে ভারতে করোনা সংক্রমণের হারকে দমিয়ে রাখা গেলেও, পুরোপুরি এর রাশ টানাটা বেশ কঠিন। কারণ, নতুন করে বহু মানুষের মধ্যে একে ছড়িয়ে দিতে পারেন এই ভাইরাসে সংক্রমিত কোনও ব্যক্তি। তাছাড়া, এই ভাইরাস বহনকারীকে চিহ্নিত করাও বেশ কঠিন কাজ।
উদাহরণ হিসাবে অভিজিৎ বলেছেন, দিল্লী থেকে যে ছেলেটি তাঁর বাড়িতে ফিরেছে, কোনও কিছু বোঝার আগেই তাঁর সংস্পর্শে আসা আত্মীয় পরিজনদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে। তাছাড়া এই ২১ দিনের মধ্যে যে করোনার প্রকোপ পুরোপুরি কমে যাবে তাও জোর দিয়ে বলা যায় না। এসব দেখেশুনে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। ১) করোনা সচেতনতার প্রচার এমনভাবে করতে হবে যাতে প্রতি পরিবারের অন্তত একজন করে সদস্য কোভিড-১৯ নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকেন। ২) সংক্রমণ হতে পারে এই সন্দেহে যেন কোনও করোনা আক্রান্ত সামাজিক ভাবে একঘরে না হয়ে যান। বা তাঁকে লুকিয়ে না রাখা হয়। তাতে সমস্যা আরও বাড়বে।
৩ নম্বর যে পয়েন্টের দিকে তাঁরা নজর দিয়েছেন, তা হল, সরকারের উচিত বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের বিষয়টি নজরে আনা।
৪) করোনা মোকাবিলায় প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তাঁরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে রিপোর্ট দিতে পারেন। ৫) সেই রিপোর্ট যাতে দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে একত্রিত করা যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশজুড়ে করোনা-বিষয়ক পরিসংখ্যানের গ্রাফ তৈরি করতে এই রিপোর্ট জরুরি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ দম্পতি।
৬) চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি মোবাইল টিম তৈরি করতে হবে। যাঁদের হাতে করোনা পরীক্ষার সরঞ্জাম থাকবে। এর জন্য দরকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। ৭) এই ভ্রাম্যমাণ টিম যাতে দেশের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবহার বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ পায়, সে ব্যবস্থাও তৈরি করতে হবে। ৮) বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির সুবিধা যাতে অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণি পান, তা খতিয়ে দেখতে হবে সরকারকে। যা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময়ে কাজে আসবে। আর ৯) করোনার প্রতিষেধক না পাওয়া পর্যন্ত সরকারকে এই ‘যুদ্ধকালীন তৎপরতা’ চালিয়ে যেতে হবে বলে পরামর্শ অভিজিৎ ও এস্থার ডুফলোর।