করোনা মোকাবিলায় দেশের অধিকাংশ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকায় আগেই লকডাউনের কথা ঘোষণা হয়েছিল। তবে তার মধ্যেই মঙ্গলবার রাত ৮টায় ফের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এসে গোটা দেশজুড়েই টানা টানা ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই মতোই মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে গোটা দেশে জারি লকডাউন। কিন্তু এই ২১ দিন কাজ ছাড়া, উপার্জন ছাড়া মানুষ খাবে কী? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে গৃহস্থালির অন্দরে। কারণ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে এই বাক্যও খরচ করতে দেখা যায়নি। কিছু জরুরি পরিষেবা ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে ছাড় দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে খাবারের জোগান সংক্রান্ত সমস্যা মিটবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই ২১ দিনের লকডাউন শুনে আগামী বেশ কয়েকদিনের খাবার সংগ্রহ করতে বাজারে বাজারে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতেই বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। চাহিদা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে এত কম সময়ের মধ্যে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগান বাড়ানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে কেন্দ্রকেই। যদিও সোমবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, ফুড কর্পোরেশন থেকে তিন মাসের জন্য খাদ্যশষ্য সংগ্রহ করতে পারে রাজ্য সরকারগুলি। আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৪৩৫ লক্ষ টন উদবৃত্ত খাদ্যশষ্য রয়েছে। প্রায় ২৭২ লক্ষ টনের মতো চাল। আর ১৬৩ লক্ষ টনের মতো গম পড়ে রয়েছে।
এই মুহূর্তে সত্যিই যাঁদের খাবার সংগ্রহ করার সামর্থ্য নেই, তাঁদের হাতেই খাবার তুলে দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ এই ২১ দিনের লকডাউনে এরকম বহু মানুষ সমস্যায় পড়বেন যাঁদের প্রতিদিনের উপার্জনে সংসার চলে। কলকারখানায় বা কোনও বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন তাঁরা। এখন থেকে টানা ২১ দিন বন্ধ থাকবে কাজ। ফলে রোজগারও হবে না। পাশাপাশি চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। সুতরাং এই মুহূর্তে তাঁদের হাতে খাবার তুলে দেওয়ার কোনও রাস্তা কেন্দ্রীয় সরকারকে খুঁজে বের করতেই হবে।
পাশাপাশি খাদ্যের জোগানেও তো সমস্যা দেখা দেবে! লকডাউনের জেরে বন্ধ রাখতে হবে চাষাবাদের কাজ। এছাড়া রাজ্যে রাজ্যে কার্ফু এবং লকডাউনের জেরে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে খাবারও পৌঁছতে পারছে না। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান খোলা থাকলেও জোগান শৃঙ্খলটাই ভেঙে পড়বে এই ক’দিনে। এছাড়াও খাদ্য অধিকার অভিযানের আওতায় মাসে তিন হাজার টাকার আর্থিক প্যাকেজেরও ঘোষণা করা যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এছাড়া স্কুল এবং অঙ্গনওয়ারির মাধ্যমে শিশুদের জন্য খাদ্যের সরবরাহ জিইয়ে রাখা।