শেষ কয়েকদিনে ভারতে যে হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তাতে দুশ্চিন্তা কয়েকগুন হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রবিবার জনতা কার্ফু পর লকডাউনের রাস্তায় হাঁটছে দেশ। নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে কলকাতা-সহ সারা দেশের ৭৫টি জেলায় লকডাউন প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই মতোই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সোমবার বিকেলে লকডাউন শুরু হলেও এক এক জায়গার ছবি এক এক রকম। রেলস্টেশন খাঁখাঁ করলেও বাজারের ছবি ভিন্ন। কোথাও একেবারে স্বাভাবিক পরিস্থিতি আবার কোথাও বাজার প্রায় খোলেইনি।
যেমন ঝাড়গ্রাম রেলস্টেশন সকাল থেকেই পুরো ফাঁকা। এই জেলায় উৎপন্ন অধিকাংশ সবজি ট্রেনে করে পাঠানো হয় টাটানগরে। ট্রেন না চলায় সব্জির পাইকারি বাজার ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশ জমজমাট। ঝাড়গ্রামের জুবিলি মার্কটে মুদিখানার দোকান ছাড়া মঙ্গলবার সব বন্ধ ছিল। মাছের দাম মোটামুটি স্বাভাবিক। গোটা মুরগি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাটা মুরগির মাংসের দাম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি। আনাজ, মাছ-মাংস ও ওষুধ ছাড়া অন্য সব দোকান বন্ধ।
ঝাড়গ্রাম সদরের মহকুমাশাসক সুবর্ণ রায় সোমবার রাতে ঝাড়গ্রাম বাজারে ঘুরে দেখে দোকান বন্ধ করে দেন। জমায়েতও বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিশ সচেতন করছে। আনাজ ও রেশনবাহী গাড়ি রাস্তায় চলতে দেখা গেছে। রাস্তার ধারে যাঁদের জামাকাপড় বিক্রি করতে দেখা যেত এদিন তাঁরা কাপড়ের তৈরি মাস্ক ৪০-৫০ টাকা দামে বিক্রি করেছেন। তবে জেলায় দোকানগুলি বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সকালে বহু লোক গ্যাসের গুদামে গ্যাস আনতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ গিয়ে তাঁদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে দেয়।
হাওড়া শহরের প্রধান বাজারগুলো বসেনি। দু’একজন করে বসলেও কেনাবেচা প্রায় হয়নি। রাস্তায় সোমবার রাত পর্যন্ত টোটো চলতে দেখা গেছে। মঙ্গলবারেও রাস্তায় টোটো ও রিকশা চলেছে। মঙ্গলবার সকালে অধিকাংশ দোকান না খুললেও রাস্তায় লোক ছিল। আবার বর্ধমান শহরে রাস্তাঘাট জনশূন্য না হলেও লোকজন বেশ কমই চোখে পড়েছে সকাল থেকে। বাজার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে টোটো চলতে দেখা গেলেও মূল রাস্তায় টোটোর দেখা মেলেনি। ওষুধের দোকান, সব্জি বাজার ও মুদিখানার দোকান খোলা থাকলেও সংখ্যায় তা ছিল বেশ কম। বেশির ভাগই সোমবার বিকেলের মধ্যে বাজার-দোকান করে রেখেছেন বলে মঙ্গলবার সকাল থেকে লোকজন কম।
জলপাইগুড়ি শহরের রাস্তাঘাট কাল বিকেল থেকেই ফাঁকা। পুলিশ রুটমার্চ করেছে। কাল নিয়ম ভাঙায় কয়েক জন মার খেয়েছে তাই আজ নিয়ম ভাঙার সাহস তেমন কেউ করছে না। লোকজন খুব প্রয়োজন ছাড়া বেরচ্ছে না। সাইকেল-মোটর সাইকেলে হাতে গোনা লোকজনকে রাস্তায় বের হতে দেখা গেছে। বাজার দোকান খুললেও লোক নেই। নতুন করে লকডাউন করা হয়েছে ধূপগুড়ি পুরসভা এলাকা, মালবাজার ও রাজগঞ্জ ব্লকের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এবং বাংলাদেশ সীমান্তের তিনটি এলাকা। এই তালিকায় যোগ হয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভার একটি ওয়ার্ড। এই সব জায়গায় মঙ্গলবার সকাল থেকে জনজীবন স্বাভাবিক ছিল।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, হরিহরপাড়া ও ডোমকলে সব যানচলাচল বন্ধ। সকালের দিকে অল্প সংখ্যা টোটো চললেও পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়। সব্জির বাজার খোলা থাকলেও ভিড় তেমন ছিল না। চোয়ার হাটেও এদিন সব্জি কেনার ভিড় চোখে পড়েনি। পুলিশ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে তৎপর ছিল। ক্রেতারা পুলিশি পাহারায় সব্জি কিনেছেন। কোনও কোনও বাজারে সব্জি বিকোচ্ছে দ্বিগুণ দামে। ১৫-১৬ টাকার আলুর দাম রাতারাতি বেড়ে ২৭-২৮ টাকা হয়ে গেছে।
মুর্শিদাবাদেরই ভাকুড়ি-হরিহরপাড়া রাজ্য সড়কে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ঢ্যাঁড়স রাস্তার উপরে ফেলে বিক্ষোভ দেখান। ঘটনাস্থলে যান হরিহরপাড়া থানার ওসি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল। বিডিও প্রত্যেক ব্যবসায়ীদেকে ন্যায্য দামে মাল কিনতে বলেন। তাঁরা ন্যায্য দাম পেলে বিক্ষোভ বন্ধ হয়। চাষিদের অভিযোগ ছিল, বাজারে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিকোলেও তাঁরা ঢেঁড়সের দাম পাচ্ছিলেন না।
উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতে সকাল থেকে দু’একটি দোকানপাট খুলেছে। এগুলি সবই সবজি ও মুদিখানার দোকান। বারাসাত শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে চলছে নাকা চেকিং। অপ্রয়োজনীয় কারণে যারা রাস্তায় অযথা ঘোরাঘুরি করছে তাদের পুলিশ সতর্ক করছে। ছোট গাড়িতে বেশি চেকিং হচ্ছে। গাড়ির যাত্রীদের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করছেন জেলা পুলিশ।
অন্যদিকে, বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া সদর, বড়জোড়া, সোনামুখী পুরসভা ও বিষ্ণুপুরে লকডাউন চলছে। বিষ্ণুপুরের চকবাজারের সব্জি বাজার আর পাঁচটা দিনের মতই স্বাভাবিক ছিল। সোমবার বিকেল থেকেই শহরে বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় তবে মঙ্গলবার সকালে ফের স্বাভাবিক ছন্দে চকবাজার।