বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এসে, দেশবাশীর কাছে রবিবার ১৪ ঘণ্টার ‘জনতা কার্ফু’ পালনের অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই মতোই গতকাল সকাল সাতটা থেকে রাত নটা পর্যন্ত ঘরবন্দী ছিলেন দেশের প্রায় সকল নাগরিকই। প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছিলেন, বিকেল পাঁচটায় সকলে যেন কাঁসর-ঘন্টা, শাঁখ বাজিয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা ডাক্তার নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের শ্রদ্ধা জানান। মোদীর কথায় সাড়া দিয়ে সেই কাজও করেছে ভারতবাসী। কিন্তু শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হঠাৎ যে ‘উৎসব’ ভারত দেখল তা কি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য? এই ‘করোনা উৎসব’ কোনভাবে আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিল না তো?
মোদী বলেছিলেন, বাড়ি থেকে বেরোতে হবে না, বাড়ির সামনে বা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালেই হবে। সেই অনুযায়ী অধিকাংশ মানুষ নিজের বাড়ির বারান্দায় বা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথা পালন করেন। কিন্তু তার পাশাপাশি এমন দৃশ্যও চোখে পড়ল যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তো বটেই রাস্তাঘাটে কাঁসর-ঘন্টা বাজিয়ে রীতিমতো মিছিল করছে মানুষ। শুধু তাই নয়, দুর্গাপুজোর ভাসানের মতো ঢাক-ঢোল নিয়ে রাস্তায় নেমে উৎসবে মেতেছে দেশবাসী। এমনকি এই উৎসব পালন করে করোনার বিরুদ্ধে ‘গো করোনা গো’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে কয়েকজনকে।
একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে যেমন বাড়ির মহিলারা রাস্তায় বেরিয়ে প্রায় মিছিল করছেন অন্যদিকে কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বড়রাও পর্যন্ত রাস্তায় নেমে রীতিমত আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছে। তবে এ বোঝা যায় কিসের আনন্দ, কিসের ফুর্তি। প্রধানমন্ত্রী সোশ্যাল ডিস্টেনসিং-এর কথা বলেছিলেন। অর্থাৎ মানুষ যেন তার নিজেদের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব পালন করে। কিন্তু কালকে যে ছবি ধরা পড়ল তাতে দূরত্বকে দূর দূর পর্যন্ত দেখা গেল না। ফলে প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ তাঁদের চাপ আরও বাড়িয়ে দিল না তো? সারাদিন কার্ফু পালন করে যেটুকু লাভ হল, ওই কিছুক্ষণ সময়েই তার দ্বিগুণ ক্ষতি হয়ে গেল না তো? এর উত্তর সময়ই বলবে।