২০ মার্চ বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবল জগতে এক কালো বা অন্ধকারতম দিন। কারণ সতেরো বছর আগে ঠিক এই দিনেই প্রয়াত হয়েছিলেন কৃশানু দে। আর গতকাল ঠিক এই দিনেই চলে গেলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসময় অন্যতম প্রিয় শিষ্যের এভাবে চলে যাওয়া গভীর রেখাপাত করেছিল প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হৃদয়ে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাই রন্টুর কথা উঠলে কেমন যেন গম্ভীর হয়ে উঠতেন পিকে। ‘ও এত কম বয়সে চলে গেল’, ঘনিষ্ঠদের কাছে বারবার দুঃখপ্রকাশ করতেন তিনি।
কৃশানু দে’র স্ত্রী পনি বলছিলেন, ‘পরলোকে প্রদীপদা নিশ্চয়ই খুঁজে নেবেন তাঁর আদরের রন্টুকে। আড্ডা হবে অনেকক্ষণ। আর সেখানে ও অভিমানের কথা বলবেই বলবে। ১৯৮৫ সালে লিগে মহমেডান স্পোর্টিংয়ের ওকে প্রথম একাদশে রাখেননি প্রদীপদা। অভিমানে জ্বরের অজুহাতে ট্যাবলেট খেয়েছিল রন্টু। যাতে পরে কোচ ওকে না নামাতে পারেন। কিন্তু তা হয়নি। ও নেমেই ইস্ট বেঙ্গলকে জিতিয়েছিল।’
আসলে সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল? কৃশানুর হরিহর আত্মা বিকাশ পাঁজি বলছিলেন, ‘কৃশানু সেবার ইস্ট বেঙ্গলে প্রথম এসেছে। লিগের ম্যাচে মুখোমুখি মহমেডান স্পোর্টিং ও ইস্ট বেঙ্গল। কোচ পিকে ব্যানার্জি প্রথম দলে রাখেননি রন্টুকে। প্রথম একাদশ দেখে কেঁদে ফেলে ও। যাই হোক, ম্যাচ শুরু হয়। চিমা ওকেরির গোলে লিড নেয় মহমেডান। বিরতির বেশ কিছুক্ষণ পরে কৃশানুকে নামান প্রদীপদা। রন্টু নেমেই পাসের আগুন ছড়াতে শুরু করে। ওর সেন্টার থেকে আমার লক্ষ্যভেদ ইস্ট বেঙ্গলকে সমতায় ফেরায়। দ্বিতীয় গোলের নেপথ্যেও আমার প্রিয় বন্ধুর অবদান ছিল। রন্টুর শট বিপক্ষ গোলরক্ষক অতনু ভট্টাচার্যের হাত ফসকে বেরিয়ে এলে তা গোলে ঠেলে দেয় দেবাশিস রায়। মাত্র ১৭ মিনিট খেলে দলকে জয়ের পথ দেখিয়ে গটগট করে মাঠ থেকে বেরিয়ে যায় রন্টু।’
এখানেই না থেমে বিকাশ আরও যোগ করেন, ‘পিকে স্যর বোধহয় সেরা পারফরম্যান্স বের করে নেওয়ার জন্যই রন্টুকে প্রথম একাদশে রাখেননি। আসলে রন্টুর সফট ফুটবল প্রদীপদা প্রথম দিকে পছন্দ করতেন না। তাই বেশি পরিশ্রম করতে বলতেন। আর রন্টু বারবার বলত, আমি ইঞ্জিনিয়ার, বাকিরা লেবার। পরে অবশ্য ও অনেক পরিশ্রম করত। সেদিন কৃশানুর মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষোভ প্রদীপদা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই এই ব্যাপারে পরে আর ওকে কিছু বলেননি। কৃশানুরও কোনও অভিযোগ ছিল না। ছিল একরাশ অভিমান। যা প্রদীপদার কাছে ও কোনওদিন প্রকাশ করেনি।’