কথায় আছে, একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর। ঠিক একই হাল এখন বিশ্ব অর্থনীতির। একে তো মন্দার কোপে ভুগছিল বাজার, এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার থাবা। আর এই জোড়া ফলাতেই ক্ষতবিক্ষত বিশ্ব অর্থনীতি। যদিও এই মহামারীতে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, এখনও তার পুরো হিসাব করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু অর্থনীতিবিদরা একবাক্যে বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ হবে বিপুল। ফিচ রেটিং-এর চিফ ইকনমিস্ট ব্রায়ান কুলটন শুক্রবার বলেন, ‘সারা বিশ্বের জিডিপি কমছে। আমরা মন্দার যুগে প্রবেশ করেছি।’ আর এই মন্দা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ভারতও। এদেশের অর্থনীতি আগে থেকেই নড়বড়ে অবস্থায় ছিল। এখন মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের সামিল কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ।
করোনাভাইরাস মহামারীর আগে আশাবাদীরা বলছিলেন, ভারতের অর্থনীতির বিকাশের হার বাড়বে ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে। কিন্তু এখন প্রায় প্রতিটি শিল্প নানারকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ছোট ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তারা সকলেই চায়, সরকার তাদের সাহায্য করুক। যেমন বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে অর্থনীতিকে ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আমেরিকায় হাজার কোটি ডলারের রেসকিউ প্ল্যান নিয়ে আলোচনা চলছে। তাছাড়া ফেডারেল রিজার্ভ ইতিমধ্যে ঋণ দেওয়া নিয়ে কড়াকড়ি শিথিল করেছে। বিভিন্ন শিল্পকে চাঙ্গা করার জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্ক অব জাপানও বিনা সুদে ঋণ দেওয়া শুরু করেছে। ব্রিটেন ঘোষণা করেছে ৩২০০ কোটি পাউন্ডের কোভিড-১৯ ফিসকাল প্যাকেজ।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, শীঘ্র তৈরি হবে ইকনমিক টাস্ক ফোর্স। কোনও কোনও মহল থেকে শোনা যাচ্ছে, মোদী সরকারও শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য রেসকিউ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে। তার মধ্যে উড়ান শিল্পের জন্য হয়তো ১২ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। উড়ান বাদে পর্যটন ও হোটেল শিল্পও মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের জন্যও প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে শীঘ্র। কিন্তু সবই এখনও ওই ‘হবে’র পর্যায়েই। যদিও টানা চার দিন পর শুক্রবার ১৬২৭.৭৩ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স দাঁড়িয়েছে ২৯,৯১৫.৯৬ অঙ্কে। উঠেছে নিফটি। লগ্নিকারীরাও ফিরে পেয়েছেন ৬.৩২ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার সম্পদ।
তবে ডলারের নিরিখে টাকার দাম আরও নেমে নতুন তলানি ছুঁয়েছে। ৮ পয়সা বেড়ে এক ডলার হয়েছে ৭৫.২০ টাকা। আর সূচক উঠলেও, উত্থান বহাল থাকা নিয়ে এখনও সংশয়েই রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে বণিকসভা সিআইআই আর্থিক ত্রাণের দাবি জানিয়ে শুক্রবার চিঠি লিখেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাদের প্রস্তাব, অর্থনীতিকে সঙ্কট থেকে বাঁচাতে অবিলম্বে ২ লক্ষ কোটি টাকা ত্রাণ প্রকল্প আনার কথা বিবেচনা করুক কেন্দ্র। ত্রাণের টাকা প্রধানত বিপর্যস্ত নাগরিকদের হাতে সরাসরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। এর আগে অন্য দুই বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার এবং অ্যাসোচ্যামও কেন্দ্র ও শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।