গত মঙ্গলবার রাতে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায় রাজ্যে। রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর থেকেই বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি ইংল্যান্ড ফেরত ওই আক্রান্ত তরুণ। আর আজ রাজ্য তথা ফের শহর কলকাতায় আরও এক তরুণের শরীরে মিলেছে নোভেল করোনা ভাইরাসের হদিশ। প্রথম আক্রান্তের মতোই এই মুহূর্তে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি লন্ডনফেরত বালিগঞ্জের বাসিন্দা ওই তরুণ। গত কয়েক দিনে তাঁর সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তার একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য দফতর। নজর রাখা হচ্ছে তাঁর গোটা পরিবারের ওপরও। যে আবাসনে ওই তরুণ থাকতেন এ দিন সেখানে পৌঁছন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। প্রাথমিক পরীক্ষার পর পরিবারের সকলকে রাজারহাটের কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ লন্ডন থেকে দিল্লী হয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন ওই তরুণ। তারপর সেখান থেকে বালিগঞ্জের আবাসনে ফেরেন। যেহেতু বাবা-মা, দাদু-দিদিমা, জেঠুকে নিয়ে বালিগঞ্জের ওই অভিজাত আবাসনের দু’টি ফ্ল্যাটে যৌথ পরিবারে থাকেন তিনি। ফলে পরিবারের সকলেরই করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আপাতত ওই পরিবারের সকলকেই গৃহ-পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি মেডিক্যাল টিমও ওই আবাসনে গিয়েছে। মেডিক্যাল টিম তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করবে। ওই তরুণের দাদু-দিদার বয়স যেহেতু ষাট পেরিয়েছে, সেই কারণে তাঁদের শারীরিক অবস্থার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বেলেঘাটা আইডি-র আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে তাঁদের চিকিৎসা চলবে।
ইতিমধ্যে তাঁদের লালারস সংগ্রহ করে নাইসেডে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। সেই রিপোর্ট হাতে পেলে শারীরিক পরীক্ষার পর ওই পরিবারের সদস্যদের রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারেও পাঠানো হতে পারে। স্বাস্থ্যভবন থেকে যে মেডিক্যাল টিম যাচ্ছে, তারা প্রথমে দেখবে ওই পরিবারের কারও মধ্যে জ্বর-সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্টের উপসর্গ রয়েছে কি না। যদি কারও মধ্যে এই ধরনের উপসর্গ থাকে বা তা বাড়ছে বলে জানা যায়, তা হলে পরিস্থিতি বুঝে প্রত্যেককেই বেলেঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে। আরও একটি বিষয়ে দ্রুত তথ্য পেতে চাইছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তা হল, দিল্লী থেকে যে বিমানে চেপে গত ১৩ মার্চ কলকাতায় ফেরেন ওই তরুণ, সেই বিমানের যাত্রীতালিকা। ওই বিমানে এ রাজ্য তো বটেই, আশেপাশের কয়েকটি রাজ্যের বাসিন্দাও ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
ওই যাত্রীতালিকা পাওয়ার পর এ রাজ্যের বাসিন্দাদের চিহ্নিত করে দ্রুত কোয়রান্টিনে পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে চায় স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি, বিমানে অন্য রাজ্যের কোনও বাসিন্দা যদি থেকে থাকেন, সেই রাজ্যকেও সতর্ক করা হবে। অন্যদিকে, ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় যখন বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানিং পাশ করে ওই তরুণ বাড়িতে ফেরেন, তখন তাঁর শরীরে কোভিড-১৯-এর কোনও উপসর্গই ধরা পড়েনি। যদিও সেইসময়েই তাঁকে ১৪ দিন গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকতে বলা হয়েছিল। নির্দেশ মেনে তিনি বাড়িতেই ছিলেন নাকি অন্য কোথাও গিয়েছিলেন, ওই তরুণের কাছ থেকে তা-ও জানার চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। বিমানবন্দরে কারা তাঁকে পরীক্ষা করেন, সেই সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্যও পাওয়ার চেষ্টা চলছে।