করোনা-আতঙ্কে থরহরি গোটা বিশ্ব। আর সম্প্রতি ভারতে এই মৃত্যুদূত থাবা বসাতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শপিং মল, পার্ক, বাগানের মতো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুগুলি। আর এবার করোনা আতঙ্কে সারা দেশে প্রত্যক্ষভাবে চাকরি হারাতে চলেছেন আড়াই কোটি লোক, এমনই আশঙ্কার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে পরিবহণ-পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে৷
সূত্রের খবর, পরোক্ষ ভাবে যারা চাকরি হারাবেন, তাঁদের সংখ্যা ২ কোটির বেশি৷ এই সম্ভাব্য কর্মহীনদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের মোট সংখ্যা হিসেব করলে করোনার জেরে দেশের ২০ কোটি লোক প্রভাবিত হয়ে পড়বেন বলে জানা গিয়েছে গতকাল হওয়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে।
করোনা আতঙ্কের জেরে যেখানে দেশের হোটেলগুলির ৮০-৯০ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়ে যাচ্ছে, বাতিল হচ্ছে বিমান ও ট্রেনের টিকিট, মানুষ পথে বেরোতে ভয় পাচ্ছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শপিং মল, সিনেমা হল, স্কুল কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, সেখানে গোটা দেশ এক ভয়ানক সার্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে এসে দাঁড়াচ্ছে, পরিবহণ-পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে বুধবার এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক সদস্যই৷
সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করে আয়োজিত হয়েছে গতকালের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক, সেই অভিযোগও উঠছে৷ সূত্রের খবর, বুধবার পরিবহণ-পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হাজির ছিলেন ৭৫ জন ব্যক্তি৷ কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবর্গ দফতরের নির্দেশিকা অমান্য করে কীভাবে এত জন লোক জমায়েত হল একটি বড় ঘরে, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন৷
সূত্রের খবর, এই সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান টি জি বেঙ্কটেশকে উদ্দেশ্য করে তৃণমূলের প্রতিনিধি রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের লেখা চিঠিতে পেশ করা আর্জির ভিত্তিতেই ওই জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছিল৷ সেই বৈঠকেই এক সদস্য প্রশ্ন তোলেন করোনা আতঙ্কের মাঝে বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট বাতিল হওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে৷
ওই সদস্যের মতে, ১ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত নর্দার্ন রেলে ১২.২৯ লক্ষ টিকিট বাতিল হয়েছে, যার জন্য নর্দার্ন রেলকে ৮৫ কোটি টাকা ফেরত দিতে হয়েছে৷ ভারতীয় রেলের ১৮টি জোনের মধ্যে অন্যতম ব্যস্ত এই জোনে ফেব্রুয়ারির প্রথম ১২ দিনে টিকিট বাতিলের পরিমাণ ছিল ৭.২৫ লক্ষ৷ ৫ লক্ষের বেশি টিকিট বাতিল হওয়ার ঘটনা ভবিষ্যতের অন্ধকার সময়কে সূচিত করছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দাবি জানান এই সাংসদ৷
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে হাজির সাংসদরা অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অবস্থা নিয়ে৷ তাঁদের আশঙ্কা, দেশের ৯৫ শতাংশ ছোট ও মাঝারি কারবারিদের হাতে যে টাকা আছে, তা দিয়ে খুব বেশি হলে আর মাত্র ২০-২৫ দিন কারবার চালানো যাবে৷ তারপরে টাকার অভাবে সব ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে৷
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত দেশের সব রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পথ চলা, এমন পরামর্শও দিয়েছেন বেশ কয়েক জন সাংসদ৷ আবার করোনা নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সার্ক গোষ্ঠী ভুক্ত দেশগুলির জন্য ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে তহবিল তৈরির কথা ঘোষণা করলেও রাজ্যগুলিকে এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্য করেনি কেন্দ্রীয় সরকার, সেই অভিযোগও করেন জনৈক সাংসদ।