মঙ্গলবারই প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায় রাজ্যে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিসেস (নাইসেড)-এর রিপোর্ট মিলতেই হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয় ইংল্যান্ড ফেরত এক করোনা আক্রান্ত তরুণকে। ওই তরুণের উচ্চপদস্থ আমলা মা, বাবা-সহ পরিবারের ছ’জন সদস্যকেও হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছে।
তবে এ তো গেল সেই পরিবারের কথা। কলকাতায় এখনও পর্যন্ত একমাত্র করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের বাসস্থান, পঞ্চসায়রের আবাসনে এখন যেন অঘোষিত ১৪৪ ধারা চলছে! ওই আবাসনের বাসিন্দা ছাড়া সকলেরই আবাসনের ভিতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
মূল ফটকের বাইরে লম্বা লাইন অর্ডার পৌঁছে দিতে আসা ডেলিভারি বয়দের। সেখানে ভিড় জমতে দেখলেই সরিয়ে দিচ্ছেন আবাসনের মাস্ক পরা নিরাপত্তাকর্মীরা। গুরুতর কারণ জানালেও ছোটখাটো পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ভিতরে প্রবেশের জন্য! লিফট জুড়ে জীবাণুনাশকের গন্ধ। সেই সঙ্গে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বাসিন্দাদের ক্ষোভ- কী করে সব কিছু জানার পরেও ছেলেকে নিয়ে ওই আবাসনে প্রায় দু’দিন কাটিয়ে দিলেন তাঁর মা! যিনি আবার রাজ্য সরকারের আমলাও বটে!
আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আক্রান্ত ওই তরুণ অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে মেল আসার পরে টনক নড়ে তাঁর মায়ের। কিন্তু তিনি এম আর বাঙুর হাসপাতালে ছেলেকে দেখানোর পরে তাঁকে নিয়ে আইডি হাসপাতালে যাওয়ার বদলে কী করে ফ্ল্যাটে চলে এলেন? কেনই বা তাঁকে নিয়েই নবান্নে গেলেন, কেউ জানেন না!’
আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আবাসনের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি মিললেও যেতে বলা হচ্ছে নাক-মুখ ঢেকে। তার আগে গেটের একপাশে রাখা সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে নিয়ে এগোনোরও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ভিতরে প্রবেশের পরে মালুম হয়, গোটা আবাসনই যেন স্বেচ্ছা-কোয়রান্টিনে চলে গিয়েছে। ১১টি টাওয়ারের প্রায় কোনও বাসিন্দাকেই বাইরে বেরোতে দেখা যায়নি। টাওয়ারগুলির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শুধু মাস্ক পরা নিরাপত্তাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, পাঁচ নম্বর টাওয়ারের তেরোতলায় বাবা ও মায়ের সঙ্গে ওই তরুণ থাকেন ১৩০১ নম্বর ফ্ল্যাটে। তাঁদেরই প্রতিবেশী সৌমিত্র চন্দ্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। স্ত্রী ঋতুপর্ণা, শাশুড়ি, দুই মেয়ে এবং চার পোষ্য নিয়ে তাঁর বাস। সৌমিত্র বলেন, ‘কবে ইংল্যান্ড থেকে এল, প্রথমে বুঝতে পারিনি। শেষে মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ আমাদের আবাসনের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খবরটা আসে।’
তাঁর স্ত্রী ঋতুপর্ণা প্রবল আতঙ্কিত। বললেন, ‘মারাত্মক ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল খবরটা পেয়ে। আবাসনের সকলে মিলে প্রথমেই ফ্লোরের কমন জায়গাগুলি পরিষ্কার করি। তার পরে লিফট। এই লিফট দিয়েই তো ওঁরা যাতায়াত করেছিলেন।’ সৌমিত্রবাবুর দাবি, ‘ওই মহিলা প্রভাব খাটিয়েছেন, এটা বিশ্বাস করি না। তবে ওঁর নবান্নের বদলে আইডি হাসপাতালে যাওয়া উচিত ছিল।’
ঋতুপর্ণাও বলেন, ‘ছেলেটি যদি রবিবারই কলকাতায় এসে থাকে, তা হলে দু’দিন ফ্ল্যাটে থাকল কেন? কেনই বা লিফট ব্যবহার করল?’ তিনি আরও বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে থাকি। ফ্ল্যাটে বয়স্ক মানুষও রয়েছেন। শুধু মনে হচ্ছে, কোনও ভাবে যদি আক্রান্ত হই, কী ভাবে সামাল দেব?’ ওই আবাসন কমিটির সম্পাদক নীলাঞ্জন দাসের কথায়, ‘কোনও আবাসন এই সবের জন্য তৈরি থাকে না। মঙ্গলবার ঘটনাটি জানার পর থেকে রাত আড়াইটে পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়েছি। নতুন অনেক পদক্ষেপও করেছি।’