মঙ্গলবার রাতেই প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায় রাজ্যে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিসেস (নাইসেড)-এ ইংল্যান্ড ফেরত এক তরুণের লালারসের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে সেই রিপোর্ট আসতেই দেখা যায় তা পজিটিভ। কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছেন ওই তরুণ। এরপরই হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয় ওই আক্রান্ত তরুণকে। আর এবার ওই তরুণের মা, বাবা-সহ পরিবারের ছ’জন সদস্যকেও এবার কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হল। তাঁদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, প্রত্যেকেরই লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে নাইসেডে। ওই মেডিক্যাল রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন চিকিৎসকেরা। করোনা আক্রান্ত ওই তরুণের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। গোটা বিষয়ের উপরে নজর রাখছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ ওই তরুণের মা, যিনি রাজ্য সরকারের এক আমলা, তিনি এবং তাঁর এক গাড়ির ড্রাইভারকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
বুধবার হাসপাতালের সুপার অনিমা হালদার বলেন, ‘ওই তরুণের বাবা, মা-সহ মোট ছ’জন এখন বেলেঘাটা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আপাতত তাঁদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে এম আর বাঙুর হাসপাতালের এক চিকিৎসক এবং এক স্বাস্থ্য সহায়ক কর্মীকেও এই তরুণের সংস্পর্শে আসার জন্য হোম আইসোলেশনে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, রবিবার রাত ৩টে নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নমেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পড়ুয়া। লন্ডন-দুবাই-দিল্লী হয়ে ওই বিমান পৌঁছয় কলকাতায়। ওই বিমানযাত্রী এবং বিমান কর্মীদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। কারণ, তাঁদেরও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে, যাঁরা ওই তরুণের আসনের আশপাশে বসেছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কা বেশি। ওই সমস্ত যাত্রীর তালিকা বার করে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পাঠানো হবে। এর পর স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে বলেও জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, সোমবার ওই তরুণ এম আর বাঙুর হাসপাতালে যান। সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে অবিলম্বে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে বলেন। কিন্তু সেই পরামর্শ মানেননি ওই তরুণ। উল্টে মঙ্গলবার তিনি মায়ের সঙ্গে নবান্নেও গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে। ফলে ওই তরুণের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রবিবার ভোরে কলকাতায় ফেরার পর ওই তরুণ কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন এবং কার কার সঙ্গে দেখা করেছেন সেই তথ্যও জোগাড় করার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য দফতর।
তবে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠরা দাবি করেছেন, রবিবার থেকে ওই তরুণ বাড়ির বাইরে যাননি। শুধু এক বার মায়ের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। ওই দাবি কতটা ঠিক তা-ও দেখা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর নির্দেশানুযায়ী করোনা আক্রান্ত ওই তরুণকে ইতিমধ্যেই একটি আন্তর্জাতিক মানের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
এছাড়া, ওই তরুণের পরিবারের সকলকেই সম্পূর্ণ আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে অন্য কোনও রোগীকে রাখা হয়নি। ওই তরুণ এবং তাঁর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট চিকিৎসক বা চিকিৎসা-কর্মী ছাড়া আর কাউকেও ওই ওয়ার্ডে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। গোটা বিষয়টি নজর রাখছে স্বাস্থ্য ভবনও। এ নিয়ে আজ, বুধবার স্বাস্থ্য ভবনে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এ রাজ্য তথা কলকাতার প্রথম নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তরুণ ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সুরক্ষার কারণে চিকিৎসক থেকে নার্স এবং হাসপাতাল কর্মীদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। গত কাল ওই তরুণ আইডি-তে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তিনি আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়নি।