সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে বসাতে হবে মহিলাদেরও। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চলা লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে গত ফেব্রুয়ারিতেই এক রায়ে এমনটা জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এবার দেশের শীর্ষ আদালতের মত, মেয়েরাও ছেলেদের মতোই ভাল নাবিক হতে পারে। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে নৌবাহিনীতে মহিলাদের স্থায়ী কমিশন দিতে হবে। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ জানায়, যে মহিলারা জাতির সেবা করেছেন, তাঁদের যদি নৌবাহিনীতে স্থায়ী চাকরি না দেওয়া হয়, তাহলে অবিচার করা হবে। প্রসঙ্গত, সরকার স্থির করেছিল, ২০০৮ সালের আগে নৌবাহিনীতে যে মহিলা অফিসারদের চাকরি দেওয়া হয়েছে, তাদের স্থায়ী কমিশন দেওয়া হবে না। সুপ্রিম কোর্ট এদিন সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।
এর আগে পদাতিক বাহিনীতে মহিলাদের নেওয়ার পক্ষে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কম্যান্ডিং অফিসারের পদের জন্য দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিলেন কয়েকজন মহিলা। সেই আবেদনের বিরোধিতায় সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে কোনও র্যাঙ্কেই পুরুষদের আধিপত্য বেশি। এই সব জওয়ানরা সাধারণত গ্রামীন এলাকা থেকে আসেন। সংস্কারবদ্ধ মানসিকতার কারণে কোনও মহিলা কম্যান্ডিং অফিসারকে মেনে নেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়াও অন্য কারণ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের সময় অথবার দুর্গম জায়গায় পোস্টিংয়ের সময় যে শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তার দরকার, সেটা মহিলারা পেরে ওঠেন না অনেক সময়েই। তাই কমব্যাট ফোর্সে মহিলাদের না নেওযাটাই যুক্তিসঙ্গত।
প্রবীণ আইনজীবী আর বালাসুব্রহ্মণ্যম ও আইনজীবী নীলা গোখেল বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগির বেঞ্চকে জানান, কমব্যাট ফোর্সে মহিলাদের কম্যান্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করলে সেনাবাহিনীর ধরনধারনই বদলে যাবে। মাতৃত্ব, সন্তানের লালনপালন নানা বিষয়ে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। অন্যদিকে, কেন্দ্রের যুক্তি খারিজ করে দিয়ে বিপক্ষের আইনজীবী মীনাক্ষী লেখি ও ঐশ্বর্য ভাটি বলেন, সেনাবাহিনীতে মহিলা অফিসারদের বীরত্বকেই কুর্নিশ জানানো হয়।
উদাহরণ হিসেবে আইনজীবী মীনাক্ষী লেখি বলেন, বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পরে অভিনন্দন বর্তমান যখন মিগ বাইসন জেট নিয়ে পাকিস্তানের এফ-১৬ ফাইটার জেটকে ধাওয়া করছিলেন, তখন তাঁকে গাইড করেছিলেন ফ্লাইট কন্ট্রোলার মিনতি আগরওয়াল। শত্রুপক্ষের ফাইটার জেটের সমস্ত সিগন্যাল পৌঁছে দিয়েছিলেন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দনের কাছে। মিনতিকে পরে ‘যুদ্ধ সেবা মেডেল’ নিয়ে সম্মানিত করা হয়। এর আগে কম্যান্ডিং অফিসার মিতালি মধুমিতাকে সাহসিকতার জন্য সেনা মেডেল দেওয়া হয়েছিল। কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের ওপর জঙ্গী হানার কঠোর মোকাবিলা করেছিলেন তিনি।