বাড়ির পিছনে করোনা পজিটিভ ধরা পরেছে। গোটা পাড়া স্যানিটাইজ হবে।অফিস সরকারি নিয়ম পালন করবে সুতরাং পর্যাপ্ত খাবার, পানীয়, ওষুধ নিয়ে Self Isolation এ ঢুকলাম আগামী কয়েকদিনের জন্য। অফিস যেতে হবে না মানে এক ছুটে কলকাতা বা সিমলা যাওয়ার বোগদামিতে নেই। নেটফ্লিক্স, বই, গল্প, বারান্দায় রোদ পোয়ানোতে আছি৷ ওটাই দেশ হোক কয়েকদিন।
ভারতীয়দের ইমিউনিটি সত্যি ভালো এতে কোন সন্দেহ নেই। তারা নর্দমার পাশে দাঁড়িয়ে যুগের পর যুগ ফুচকা খেয়েছে, তাতে ধুলো, ফুচকা কাকুর বোগলের চুল, নাকের পোটা ও মিশেছে হয়তো, কিন্তু পেট খারাপ হয়নি। ফটজল বা একটাকার পেপ্সি খেয়ে মারা যায় নি। পৃথিবীর সব সস, ভিনিগার আর গ্রেভি দিয়ে বানানো ঠ্যালার চাউমিন খেয়ে ও দিব্বি পরের দিন অফিস করেছে, ভাগাড়ের থেকে কি না কি খেয়েছে৷ ভারতীয় তবু জিন্দা হে!
এই বীরত্বের কথা ফেসবুকে হোয়াটসঅ্যাপে তারা প্রচার ও করছে। একদল বলছে করোনা, করোনার চোদ্দ গুষ্টি ও আমাদের কিছু করতে পারবে না কারণ আমরা অনেক কিছু দেখেছি! এক একজন কালপুরুষ চায়ের দোকানে কখনো ডাক্তার সাজে, কখনো মোক্তার! আরেক দল স্বার্থপর আর বোকা। সে ভাবছে সবচেয়ে ভালো মাস্ক, গ্যালন গ্যালন স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়েমুছে নিলেই সে সেফ! বাকিরা মরুক গা, জনসংখ্যা তো কমবে। ইটালির এক মেয়র, স্পেনের মন্ত্রী মারা গেছে বটে।
করোনা মোকাবিলায় ভারতের সবচেয়ে বড় অন্তরায় যেটা হবে তা হলো জনসংখ্যা। আমাদের দেশে প্রতি এক স্কোয়ার মিটারে দশটা লোক থাকে। ট্রেনে বাসে আটোতে ঠাসাঠাসি করে যাওয়ার রোম্যান্টিকতা নিয়ে আমরা গদ্য ও পদ্য করি কিন্তু এই সময় এই ছোঁয়াচটাই মারাত্মক। আপনি যতোই বিবেকবান হন, যতোই আপনার মনে হোক না কেন অস্পৃশ্যতা ফিরে এসেছে, এই সময় স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। ওটা ছাড়া বাঁচার পথ নেই৷
আমাদের কমিউনিটি লিভিং, মাস ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম একদিন দুম করে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব না। বরং যারা ব্যবহার করছে তাদের বিরত থাকতে বলুন। বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষকে৷ তারাই Virus pollination এর কাজটা করবে যদি থামানো না যায়। যে মেয়েটি আপনার বাড়িতে কাজে আসছে তাকে সাবান, স্যানিটাইজার, মাস্ক দিন। তাকে বোঝান ওসব বাহারী N95 মাস্ক না হলে ও চলে। নিজে ও বুঝুন। দিলীপ ঘোষ এবার ভুল বলেনি। সারজিকাল মাস্ক কিনে নিন বা বানান। স্যানিটাইজার ও পারলে বানাতে পারেন৷ মাথায় রাখুন Pandemic হলে আপনার সুগন্ধি স্যানিটাইজার না সামান্য Ethyl alcohol আর Alloe vera র মিশ্রণই কাজে আসবে।
রাজনৈতিক নেতারা এই সময় অন্তত অগ্রণী ভূমিকা নিক। ট্রেনে বাসে স্যানিটাইজার নিয়ে উঠে সচেতনতা গড়ে তুলুক এরা। যে ওষুধের দোকান পাঁচগুন দামে মাস্ক বিক্রি করছে তাকে পাঁচ মাথার মোড়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হোক। রাজনৈতিক দলগুলো সারাবছর জ্যাঠামি না করে, এই সময় Moral Policing টা করুক। যে স্কুল এখনো খোলা, যেখানে জটলা বেঁধেছে, যারা মাঠে ময়দানে এখনো আছে, যারা ব্যবসায়িক স্বার্থে অনুষ্ঠান চালু রেখেছে বন্ধ করিয়ে দিক। পাশাপাশি যাদের দরকার তাদের রেশন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করুক। ডাক্তার, পুলিশ, ব্যাংক কর্মী, সাংবাদিকের যদি কাজ চালিয়ে যেতে পারে, রাজনৈতিক কর্মীরা ও পারবে। লেকচার না ঝেড়ে মাঠে নামুক।
খবরের কাগজ পেতে সবাই মিলে একসাথে মুড়ি মাখা খাওয়া, এক থালা থেকে ভাগ করে রুটি মাংস খাওয়া, এমনকি এক বোতল বা থেকে ও খাওয়া এই সময় স্বেচ্ছায় এড়িয়ে চলুন। ঘরে থাকুন। নিজের পরিবারের সাথে থাকুন। করোনা পজিটিভ কারো সংস্পর্শ এসে থাকলে চৌদ্দদিন একলা থাকুন।
রুপম ইসলামের ওই একলা ঘর আমার দেশ, আমার একলা থাকার অভ্যেস গানটাই মন্ত্র হোক এই দু সপ্তাহ। চেনটা একবার ভেঙে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত। সেটার জন্য সরকারকে সাহায্য করুন। বাড়িতে থাকুন। আশেপাশে করোনা পজিটিভ হলে কাজের লোককে আশ্বাস দিন সে পুরো টাকাই পাবে কিন্তু এক সপ্তাহ সে যেন না আসে৷
চেনটা ভেঙে দেওয়াটা ভীষণ দরকারি। আজ আপনি ভাবছেন আপনার আশেপাশে কারোর হয়নি তাই আপনি সেফ, কিন্তু মাথায় রাখবেন আমরা কেউ সেফ নই। ট্রাম্প না, টম হ্যাংক্স না, ভ্যাটিকানের পোপ না, মক্কা-মদিনা না, সিদ্ধিবিনায়ক না, আপনি না আমি ও না। চেনটা ভেঙে দিন, চেনটা ভেঙে দিন।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত