আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১-এ রাজ্য বিধানসভার ভোট। আর আগামী মাসে হতে চলা পুরসভা নির্বাচনই তার সেমিফাইনাল। এই দুই নির্বাচনকেই পাখির চোখ করেই ‘দিদিকে বলো’র পর এবার ‘বাংলার গর্ব মমতা’ প্রচার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। আর এই পর্যায়ে দলের পুরনো কর্মীদের ফের সংগঠনের কাজে যুক্ত করার কাজও শুরু করে দিয়েছে জোড়াফুল শিবির। যা আক্ষরিক অর্থে একেবারে প্রবীণ বরণ। নবীনের হাতে পুরাতনের স্বীকৃতি। কর্মসূচীর পোশাকি নাম ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’। ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচীর আওতায় রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের প্রবীণ ও পুরোনো কর্মীদের সম্মান জানাচ্ছে দলের অপেক্ষাকৃত নবীন প্রজন্ম।
সম্পূর্ণ দল নিয়ন্ত্রিত এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য দলনেত্রীর নির্দেশ শিরোধার্য করে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের পুরোনো প্রজন্মের অবদান স্বীকার করা। যাঁরা নানা কারণে দলে সক্রিয়তা কমিয়েছেন তাঁদের কাছে ডেকে নেওয়া। তৃণমূলের জন্মলগ্ন বা তারও আগে থেকে যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠিন সংগ্রামের শরিক হয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা দেখানো। প্রত্যেক বিধানসভা এলাকায় প্রবীণ ও পুরোনো দলীয় কর্মীদের তালিকা তৈরি করে দিয়েছে দলই। তাঁদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানাচ্ছেন বিধায়ক-সাংসদ-পর্যবেক্ষকরা। কোথাও কোথাও টোকেন গিফটও তুলে দেওয়া হয়েছে সেই পুরোনো কর্মীদের হাতে।
শুধু তাই নয়। প্রবীণদের হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত সংশাপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। যার শিরোনাম ‘সম্মাননা জ্ঞাপন’। তাতে লেখা ‘তৃণমূল কংগ্রেস আপনার মতো পুরোনো সহকর্মীকে সম্মানিত করে গর্বিত বোধ করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলের প্রতি আপনার আনুগত্য-সহ মানুষের হয়ে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ তৃণমূল কংগ্রেস আপনাকে কুর্নিশ জানায়। আসুন আমরা সবাই মিলে সোনার বাংলা গড়ে তুলি।’ শউধু তাই নয়। মধ্যাহ্নভোজে কোথাও কোথাও প্রবীণ কর্মীদের পাতে পরিবেশন করতে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের।
নিজের বিধানসভায় এই স্বীকৃতি কর্মসূচী পালন করে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এখানে যাঁদের দেখছেন তাঁরা কেউই অন্য রাজনৈতিক দলে চলে যাননি। হয় তো আগে দশটা মিটিং মিছিল করতেন, এখন তিনটে মিছিলে থাকেন। তাঁরা যাতে আগের মতোই দশটা মিছিল করেন সেই জন্যই এই প্রয়াস।’ উত্তর দমদমের কর্মসূচীতে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য নিজেই নেমে পড়েন কর্মীদের পাতে খাবার পরিবেশন করতে। হাবড়ায় খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং বিধাননগরে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু স্বীকৃতি সম্মেলনে প্রবীণ কর্মীদের সম্মান জানান।
উল্লেখ্য, মমতা প্রায় বছর দু’য়েক আগে থেকেই বিভিন্ন দলীয় সভায় বলে আসছেন, ‘দলের পুরোনো কর্মীরা দলের সম্পদ। নতুন-পুরোনো সবার সমাহারেই দলটা চলবে। যারা দূরে সরে আছেন তাঁদের ফিরিয়ে আনুন।’ এবার রাজ্যজুড়ে ‘স্বীকৃতি সম্মেলনের’ ব্যাপ্তি দেখে মনে করা হচ্ছে, দলনেত্রীর বার্তার বাস্তবায়নেই এমন কর্মসূচী। ভবানীপুরে কর্মসূচী পালনের মঞ্চে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘যাঁরা বহু দিন ধরে মমতাদির সঙ্গে রয়েছেন, তাঁরা বসে যেতে পারেন না। তাঁরা হয়তো তাঁদের প্রজন্মের ব্যস্ততায় জড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের সকলকে সম্মানিত করে আমরা আবার এগিয়ে যাব।’