দেশে এমন কোন আইন রয়েছে যার আওতায় বিক্ষোভ বা আন্দোলনকারীদের পোস্টার ছাপিয়ে রাস্তায় টাঙানো যায়? এদিন কড়া সুরে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। যোগী আদিত্যনাথ যেভাবে সিএএ বিরোধীদের পোস্টার ছাপিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাগিয়েছেন, তা সরাসরি বেআইনি বলেই জানিয়ে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। সংবিধানে গোপনীয়তার রক্ষার অধিকার আইনকে সরাসরি এই পোস্টার লঙ্ঘন করে। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ইউইউ ললিত বলেন, কোনও বিশৃঙ্খল আচরণ করার অধিকার কারোর নেই। আদালত এই যুক্তির সঙ্গে সহমত। কিন্তু এমন কোনও আইন নেই যাতে সিএএ বিরোধীদের পোস্টার ছাপিয়ে রাস্তায় লাগানো যায়। আদালতের এই পর্যবেক্ষণ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আদালতে উত্তরপ্রদেশ সরকারের হয়ে সওয়াল করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি ১৯৯৪ সালের একটি মামলার উদাহরণ তুলে দাবি করেন, যেসব মানুষ সন্ত্রাস ছড়ায় এবং আন্দোলনের নামে হাতে বন্দুক তুলে নেয় তাদের গোপনীয়তা রক্ষার কোনও অধিকার নেই। এই দাবিও খারিজ হয়ে যায় শীর্ষ আদালতে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট অবশ্য আগেই গোটা মামলায় যোগী সরকারকে ধাক্কা দিয়েছিল। তারা জানিয়ে দিয়েছিল, এইভাবে বিক্ষোভকারীদের পোস্টার দেওয়া যায় না প্রকাশ্যে। সেই সময় যোগী আদিত্যনাথ এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশ উড়িয়ে দিয়ে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নয়। তবে এবার উচ্চতর আদালতেও মুখ পুড়ল যোগী সরকারের। এবার আদালতের নির্দেশ যোগী আদৌ পালন করে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
সিএএ বিরোধী আন্দোলনে সরকারি সম্পত্তি যাঁরা নষ্ট করেছে তাদের কাছেই ক্ষতিপূরণ আদায় করছে উত্তর প্রদেশ সরকার। তার জন্য অভিযুক্তদের নামে পোস্টার তৈরি করে লক্ষৌয়ের রাস্তায় দিয়েছিল যোগী সরকার। তাই নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করা হয়। সেই মামলার জরুরি শুনানিতে তা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সিএএ বিরোধী আন্দোল ঘিরে হিংসা ছড়িয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। ২০ জনেরও বেশি মানুষ সেই হিংসায় নিহত হন। হিংসায় অভিযুক্ত ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরকারীদের থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়ার কথা ঘোষণা করে বিজেপির রাজ্য সরকার। সেই ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যেই গত বৃহস্পতিবার ৫৩ জন প্রতিবাদীর নাম, ঠিকানা-সহ লক্ষৌয়ের রাস্তার পোস্টার দেয় উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।