বেফাঁস মন্তব্য করায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তিনি কখনও বলেন, ‘মহাভারতের সময়ে স্যাটেলাইট অস্তিত্ব’, আবার কখনও নিদান দেন, ‘শিল্প আনার থেকে গো-পালন ভালো’। ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে যখনই মুখ খুলেছেন বিপ্লব দেব, তখনই জন্ম নিয়েছে নতুন নতুন বিতর্ক৷ এবার ফের মুখ খুলেই লোক হাসালেন তিনি। বাল্মীকির রামায়ণে স্বয়ম্বর সভায় হরধনু ভেঙে সীতাকে ‘জয়’ করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। ছোট্ট শিশুটিরও এ খবর জানা। কিন্তু নাম ভুলে রামের জায়গায় মহাভারতের অর্জুনকে নিয়ে এলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী! এখানেই শেষ নয়। সেই সঙ্গে, দেশে নারী-পুরুষের অনুপাতের উদ্ভট পরিসংখ্যান দিয়ে আরও হাস্যাস্পদ করলেন নিজেকে। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এখন টিপ্পনী আর বিদ্রুপের বন্যা বইছে তাঁকে ঘিরে।
প্রসঙ্গত, কথায় কথায় রামায়ণ-মহাভারতের উদাহরণ টানা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় অভ্যাস। নিজেদের ঘোর ‘হিন্দুত্ববাদী’ জাহির করতে বিজেপি নেতাদের এটা বোধ হয় একরকম বাধ্যতা! কিন্তু বিপ্লব দেব আর কারও সঙ্গে তুলনীয় নন। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই তিনি মহাভারতের যুগে ইন্টারনেট থাকার কথা জোর দিয়ে বলেছিলেন। তাঁর ‘অকাট্য’ যুক্তি, ‘নাহলে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে সঞ্জয় ঘরে বসেই কী করে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে গেলেন?’ ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক’ চাণক্যের শিক্ষকতার (মৃত্যুর প্রায় চারশো বছর পরে?) তথ্যদান, কেবলমাত্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরই সিভিল সার্ভিসে যাওয়া উচিত বলে উপদেশ, জলে হাঁসের সাঁতারে অক্সিজেন উৎপাদনের অত্যাশ্চর্য বিজ্ঞান ব্যাখ্যা ইত্যাদি নিজের বহু কীর্তিতে বিপ্লব অতুল খ্যাতি অর্জন করেছেন।
সম্প্রতি, জনসংযোগের কর্মসূচী হিসেবে ফি রবিবার কোনও এক বাড়িতে হাজির হয়ে দুপুরের ভোজ সারছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেগুলির আবার লাইভ সম্প্রচারও হচ্ছে। এক বাড়িতে গিয়ে তাঁর ‘ঝোল আছেনি ঝোল, লে আও’ সংলাপটি এখন রীতিমতো বিখ্যাত। এ ছাড়া আসন্নপ্রসবা কোনও কোনও বধূকে ঘরে গিয়েই নিজের হাতে পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে দিচ্ছেন। এমনই ‘স্বাদ’ খাওয়াতে গিয়ে এক তরুণী অন্তঃসত্ত্বাকে মুখ্যমন্ত্রী নিচু স্বরেই জিজ্ঞেস করেন, ‘ফার্স্ট টাইম? প্রথম বার?’ এটাও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভাইরাল। সঙ্গে নিন্দামন্দ। কিন্তু এবার আগরতলা রবীন্দ্রভবনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি আবার নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন।
সব কিছুতেই একটা ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ জুড়ে দিতে ভালবাসেন বিপ্লব। যেমন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’। এবার তিনি বলেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ নারী সীতা। পিতাশ্রী জানতেন। তাই সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর অর্জুনের সঙ্গে সীতার বিবাহ দিতে স্বয়ম্বর…’, তবে এটুকু বলেই থেমে যান তিনি। কারণ শ্রোতাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হতেই বুঝতে পারছিলেন কিছু একটা ভুল হয়েছে। এরপর কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ছোট্ট করে বলেন, ‘সরি’। তাঁকে ‘রাম’নাম মনে করাতে সাহায্য করেন সামনের দিকে বসা মহিলারা। এ নিয়ে টিপ্পনী-বিদ্রুপ তো চলছেই। পাশাপাশি রামের নাম ভুলে গেলে রামভক্ত রাজনৈতিক দল বিজেপিতে থাকা যায় কি না, এমন প্রশ্নও উঠছে। ওদিন বিপ্লব দেব এমনও ‘উদ্ভট’ পরিসংখ্যান দিয়েছেন যে, দেশে পুরুষ-নারীর সংখ্যানুপাত হল এক হাজারে একশো ষাট। যা আসলে ৯৬০ হওয়ার কথা। কারণ তিনি নিজেই বলেন, ‘পার্থক্য মাত্র চল্লিশ’। এ নিয়েও চলছে হাসিঠাট্টা।