এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বজুড়েই আতঙ্কের নাম নভেল করোনা। যে মারণ ভাইরাসের তাণ্ডবে চীন-সহ বিভিন্ন দেশেই অব্যাহত মৃত্যুমিছিল। সম্প্রতি ভারতের থাবা বসিয়েছে করোনা ভাইরাস। যা নিয়ে দেশবাসী এখন থরহরিকম্প। তবে করোনা মোকাবিলায় বাংলার তৃণমূল সরকারের কাজে গর্বিত বোধ করছে কেন্দ্র। এবার এমনটা জানাল খোদ মোদী সরকারই। স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকে প্রশংসাসূচক বার্তা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদে করোনা সন্দেহে ভর্তি এক রোগীর মৃত্যুর আগে তৎপরতার সঙ্গে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শুধু তাই নয়, সৌদি থেকে কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে মুর্শিদাবাদে বাড়ি পৌঁছানো এবং বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাওয়ার মধ্যে ওই ব্যক্তি যতজনের সংস্পর্শে এসেছেন, প্রত্যেককে দ্রুত খুঁজে বের করার জন্যই এই প্রশংসা করা হয়েছে। এমনটাই জানা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে।
জিনারুল হক নামে ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা ট্যাক্সি, বাসচালক, মারুতি ভ্যান, দুটি টুকটুকের চালক, তাঁর পরিবারের লোকজন এবং বিমানে তাঁর সঙ্গে থাকা দুই যাত্রী মিলিয়ে সবশুদ্ধ ১৪ জনের বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর জোগাড় করেছিল স্বাস্থ্যভবন। প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়। কলকাতার বাসিন্দাদের বাড়িতেই আইসোলেশনে রাখার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
উল্লেখ্য, সৌদি আরব থেকে দুবাই হয়ে ৭ মার্চ সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন জিনারুল। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১০ টায় তিনি ট্যাক্সি ধরে ধর্মতলায় যান। বহরমপুরের একটি বেসরকারি বাস ধরেন। রাত আটটায় বহরমপুর পৌঁছে সেখান থেকে একটি টুকটুক ধরে সদরঘাট নদীর পাড়ে পৌঁছন। সেখান থেকে নৌকা করে যান পলাশপুরী বেলেপাড়ায় তাঁর বাড়িতে।
রাত তখন ৯টা ৫৮ মিনিট বাজে। গোটা রাস্তাতেই শরীর অত্যন্ত খারাপ থাকায় দফায় দফায় বমি করতে থাকেন জিনারুল। রাতে স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখানো হয় তাঁকে। তিনি আইভি ফ্লুইড স্যালাইন দেওয়া হয়। তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরদিন মানে ৮ মার্চ সকাল ১০টা নাগাদ একটি মারুতি ভ্যানে করে তাঁকে নিয়ে আসা হয় এবং ভর্তি করা হয় মুর্শিদবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ৮ তারিখ বিকেলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
জ্বর, বমি, শ্বাসকষ্ট, কাশি ইত্যাদি উপসর্গ থাকায় চিকিৎসকদের করোনা বলে সন্দেহ হয়। মৃত্যুর আগে তাঁর শরীর থেকে দু’ধরনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জেলাশাসককে অনুরোধ করে নমুনা পৌঁছে দেওয়ার গাড়িতে করে জিনারুলের নমুনা দুটি পৌঁছে দেওয়া হয় বেলেঘাটার নাইসেড কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে। তখন ৯ মার্চ, ভোর সাড়ে চারটে। করোনা সন্দেহে ভর্তি রোগীর নমুনা পরীক্ষা করার জন্য ঘটনার গুরুত্ব বুঝে রাত জেগেছিলেন পরীক্ষার কাজে যুক্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং টেকনোলজিস্টরা।
সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু, তার আগে পর্যন্ত ট্যাক্সি, বাস, নৌকা, মারুতি ভ্যান সহ যে যে বাহনে তিনি গিয়েছিলেন, প্রত্যেকটির চালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পাশাপাশি বাড়িতে যাঁদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদেরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মুর্শিদবাদ মেডিক্যালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে করোনা সংক্রমণ এড়াতে এই চটজলদি উদ্যোগে অত্যন্ত সন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব ‘প্রাউড অব ইউ’ বার্তা দিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ আমলাকে।