ইয়েস ব্যাঙ্কের ভরাডুবিতে জমা পুঁজি নিয়ে আতঙ্কে সাধারণ গ্রাহকেরা। জমা টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কিনা, পেলেও তা কবে এবং কিভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। তবে শুধু সাধারণ মানুষই নয় এরাজ্যের সরকারের বিপুল আমানতও ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রয়েছে। ব্যাঙ্কের ভরাডুবির ফলে ওই টাকা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজ্যের খাদ্য দপ্তর কৃষকদের ধান কেনার জন্যও টাকা গচ্ছিত রেখেছিল ইয়েস ব্যাঙ্কে। ইয়েস ব্যাঙ্ক মুখ থুবড়ে পড়ায় রাতারাতি ধান কেনার দ্বায়িত্ব থেকে তাদের সরিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যঙ্ককে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে টাকা ইয়েস ব্যাঙ্ককে দেওয়া হয়েছিল তা ফেঁসেই রয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের অন্য কয়েকটি দপ্তরের বেশ কিছু প্রকল্পের টাকাও ওই ব্যঙ্কে গচ্ছিত রয়েছে। এমত অবস্থায় টাকা ফে্রত পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ রাজ্যের অর্থ কর্তাদের কপালে।
এর মধ্যে ধান কেনার জন্য খাদ্য দপ্তরের তরফে ইয়েস ব্যাঙ্ককে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৪২ কোটি টাকা। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন ‘সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য রাজ্য সরকার ইয়েস ব্যাঙ্ককে দায়িত্ব দিয়েছিল। রাজ্যের চারটি জেলায় সেন্ট্রাল পারচেজিং সেন্টারের মাধ্যমে ধান কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের। সেজন্য রাজ্য সরকার ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে ৪২ কোটি টাকা দিয়েছিল’। দিন কয়েক আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ইয়েস ব্যাঙ্কের খাতা থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন রাজ্য সরকারকে ধান বিক্রি করা প্রায় ৪০০ জন কৃষক। খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই কৃষকেরা ৫৯ হাজার টাকার বেশি মূল্যের ধান রাজ্য সরকারকে বিক্রি করেছেন। তাঁদের ইয়েস ব্যাঙ্কের চেক দেওয়া হয়েছে। অথচ তাঁরা প্রাপ্য টাকা তুলতে পারছেন না।
এই সিদ্ধান্ত সামনে আসায় তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন খাদ্য কর্তারা। ইতিমধ্যেই ইয়েস ব্যাঙ্কের যে চেক কৃষকদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে, সেগুলি তাঁদের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছে। ওই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে নতুন করে ৪৬০০টি চেক ইস্যু করা হয়েছে ধান কেনার জন্য। একইসঙ্গে ইয়েস ব্যাঙ্কে জমা থাকা ৪২ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। নোডাল সংস্থার সঙ্গে কথা বলে ওই পুঁজি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী।
তবে শুধু খাদ্য দপ্তরই নয় এরাজ্যের সাধারণ গ্রাহক এবং অন্য বেশ কিছু দপ্তরের বিপুল পুঁজিও জমা আছে ডুবে যাওয়া ইয়েস ব্যাঙ্কে। সব মিলিয়ে এই আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ ১৩০০ কোটি টাকার বেশি বলে খবর অর্থ দপ্তর সূত্রে। তা ফেরত পাওয়াটাও এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থ দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্যে ইয়েস ব্যাঙ্কের ২৬টি শাখা এবং ৩৬টি এটিএম কাউন্টার রয়েছে বাংলায়। এই বেসরকারি ব্যাঙ্কটির আমানতের পরিমাণ প্রায় ৬৭৮২কোটি টাকা। তার মধ্যে এরাজ্যে গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া হয়েছে ৫৪৭৫ কোটি টাকা। অর্থ দপ্তরের হিসাবে আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ মিলিয়ে ইয়েস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রয়ে গেছে রাজ্যবাসীর প্রায় ১৩০৭ কোটি টাকা। এই ব্যাঙ্ক ডুবে যাওয়ার পর আশঙ্কা এই টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে।