গত শুক্রবার থেকেই সেনসেক্স-নিফটি সবই প্রায় তলানিতে। রীতিমত ডুবতে বসেছে ইয়েস ব্যাঙ্ক। আর সেই ইয়েস ব্যাঙ্ককে উদ্ধার করতে স্টেট ব্যাঙ্ক প্রথমেই ২,৪৫০ কোটি টাকা ঢালতে চলেছে। কিন্তু একটা লোকসানে ডুবে থাকা সংস্থা যার শেয়ারের কোনো দামই নেই, সেখানে কেন স্টেট ব্যাঙ্ক আমজনতার সঞ্চয়ের টাকা ঢালতে চলেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর মন্তব্য, ‘এটা উদ্ভট ঘটনা’। তিনি বলেন, ‘ইয়েস ব্যাঙ্কের নিট সম্পদ বোধহয় শূন্য। সেখানে স্টেট ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯% মালিকানা কিনতে গিয়ে ২,৪৫০ কোটি টাকা ঢালছে। ২ টাকা দামের শেয়ার ১০ টাকা দামে কিনছে। এটা উদ্ভট বিষয়।’
ডুবতে বসা ইয়েস ব্যাঙ্কে কেন স্টেট ব্যাঙ্কের আমজনতা, বিশেষত সাধারণ মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের টাকা ঢালা হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে আইডিবিআই ব্যাঙ্ককে উদ্ধার করতেও এলআইসি বা জীবন বিমা নিগমকে কাজে লাগানো হয়েছিল। লোকসানে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ করে রাজকোষে টাকা তুলতেও এলআইসি-কে কাজে লাগানো হয়েছে। আমজনতার সঞ্চয়ের টাকা কেন এ ভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলা হবে, এর জেরে স্টেট ব্যাঙ্ক বা এলআইসি-র আর্থিক স্বাস্থ্য খারাপ হলে কী হবে, তা নিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন যদিও কোনও উত্তর দিতে চাননি। কিন্তু তাঁর দাবি ছিল, ইয়েস ব্যাঙ্কের পরিস্থিতির দিকে অর্থ মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজর ছিল। সে কারণেই ডুবতে বসেছে দেখে বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নেয়। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার উপরে নিয়ন্ত্রণ, নতুন ঋণ বিলিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
আজ চিদম্বরম প্রশ্ন তুলেছেন, ২০১৪-র মার্চ থেকে ২০১৯-এর মার্চের মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্কের বকেয়া ঋণের পরিমাণ প্রতি বছর ৩৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। যেখানে সামগ্রিক ভাবে ব্যাঙ্ক ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ বছরে ১০ শতাংশ কম হারে বেড়েছে। নোট বাতিলের ঠিক পরের দু’বছরে বকেয়া ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী? অর্থ মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কি সেইসময় চোখ বুজে ছিল? তিনি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রক বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কে কি এক জনও ব্যাঙ্কের ব্যালান্স শিট পড়ে দেখেননি? ব্যাঙ্কের সিইও বদলে নতুন সিইও নিয়োগের পরেও পরিস্থিতি পাল্টাল না কেন? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নরকে ইয়েস ব্যাঙ্কের বোর্ডে নিয়োগের পরেও পরিস্থিতির বদল হল না কেন? ২০১৯-র জানুয়ারি-মার্চে ইয়েস ব্যাঙ্ক ক্ষতি ঘোষণা করার পরেও বিপদ-ঘন্টি বাজল না কেন?’
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘আমার মনে হয় না, এসবিআই স্বেচ্ছাসেবক হয়ে উদ্ধারে নেমেছে। যেমন এলআইসি-ও স্বেচ্ছায় আইডিবিআই-এর উদ্ধারে নামেনি। এ সব কাজ উপরমহলের আদেশ মেনে করতে হচ্ছে।’ উপরমহল বলতে চিদম্বরম যে দেশের বর্তমান শাসক দলের কথাই বলেছেন, তা পরিষ্কার।