বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আমি নানারূপে দেখেছি। কখনও তিনি দলনেত্রী, কখনও প্রশাসনিক প্রধান, কখনও বা বিরোধী দলনেত্রী। কিন্তু আজ মালদার গাজোলের আদিবাসী গ্রামে তাকে এক নবরূপে আবিষ্কার করলাম। মনের আনন্দে তিনি মিশে গেলেন গ্রামের আদিবাসী মানুষদের সঙ্গে।
আদিবাসীসের গ্রামে এক গণবিবাহের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসী রীতি অনুযায়ী তারা তাকে জল ভরা একটা কাঁসার থালার ওপর পা রাখতে বললো। মুখ্যমন্ত্রী কিছুতেই তা করবেন না, কিন্তু এটা আদিবাসী সমাজের একটা প্রচলিত রীতি। এভাবেই তারা তাদের অতিথিদের বরণ করেন, পা ধুইয়ে যত্ন করে গামছা দিয়ে তা মুছে দেন। কেউ এটা না করলে দুঃখ পান। এই রীতি আমি আগে অন্যান্য আদিবাসী গ্রামেও দেখেছি। কাজেই এটা না মানা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর আর কোন উপায় ছিলনা।
যাইহোক তাদের সঙ্গে কথাবার্তা, নবদম্পতিদের আশীর্বাদ করা, উপহার দেওয়া ইত্যাদি কাজ সেরে দেখলেন গ্রামের একটা জায়গায় আদিবাসী মেয়েরা ধামসা মাদলের তালে তালে নাচছেন। তিনি এগিয়ে গিয়ে পা মেলালেন তাদের সঙ্গে। যারা নাচছিলেন তারা তো খুব খুশি, মুখ্যমন্ত্রীর শাড়ির ওপর একটা নীল রঙের কাপড় জড়িয়ে দিলেন তারা। তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এক আপন ভোলা কিশোরীর মত মনের আনন্দে হাসতে হাসতে নাচতে লাগলেন তিনি। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। প্রায় ২০-২২ মিনিট তিনি নাচলেন।
বহুদিন ধরে আমি তার নানা অনুষ্ঠান কভার করছি কিন্তু এ দৃশ্য কোনদিন দেখিনি। এ যেন এক অচেনা মুখ্যমন্ত্রী! আদিবাসীরাও অবাক, ভীষণ খুশি হয়েছেন তারা। এরকম ছকের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে আমি দেশের আরেকজন প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছি, তিনি ইন্দিরা গান্ধী। কিন্তু নাচের তালে পা মেলালেও তাকে দেখে মনে হত তিনি অন্য জগতের মানুষ, বাইরে থেকে এসেছেন।
আজকে নাচের আসরে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে আমার কিন্তু তেমন কিছু মনে হয়নি। তার একটা বড় কারণ হল, মুখ্যমন্ত্রীর চলাফেরা, কথাবার্তা, মেলামেশার আটপৌরে ধরণ। আমার মনে হচ্ছিল তিনি যেন ওদেরই একজন, ঐ গ্রামেই যেন তার বসবাস। এই আন্তরিকতাটাই দেশের অন্যান্য রাজনীতিবিদদের থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলাদা করে দিয়েছে। কাজের বাইরে এমন এক মুখ্যমন্ত্রীকে আমি দেখলাম যার নাচে প্রাণের উছ্বাস, মুখে শিশুর মত হাসি।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত