মাসখানেকের মধ্যেই শুরু হয়ে যাওয়ার কথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার বা এনপিআর তৈরির কাজ৷ যে জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসাধারণের থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা৷ কিন্তু তার আগে দেশজুড়ে আম জনতার ‘প্রবল অসন্তোষ ও আতঙ্কের’ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এনপিআর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করল সংসদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি। বলা হয়েছে, অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকার ‘পথ খুঁজে বার করুক’। তা না হলে সমগ্র জনগণনা প্রক্রিয়া ‘ধাক্কা খাবে’।
বৃহস্পতিবার সংসদে পেশ হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ২২৪তম রিপোর্ট। মোট ১২৩ পাতার রিপোর্টের ২৯ ও ৩০ নং পাতায় এনপিআর ও জনগণনা নিয়ে সমীক্ষা ও সমাধানের লক্ষ্যে মন্তব্য করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে আম জনতার অসন্তোষ ও আতঙ্কের কারণে বিরোধী–শাসিত একাধিক রাজ্য সরকার এনপিআরের বিরোধিতা করছে।
২০১০ সালে এনপিআর চালু হয়েছে। ২০১৫ সালে এক দফায় তথ্য সাম্প্রতিকীকরণ করা হয়েছে। যা জনগণনার অঙ্গ। এখন এনপিআর–কে এনআরসি–র ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠছে। বিশেষত যে ধরনের তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে, তা নিয়েই ধন্দ। এই পরিস্থিতিতে কমিটি বলেছে, গোটা দেশে সুষ্ঠুভাবে ২০২১ সালের জনগণনা সম্পন্ন করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বিরোধিতার বিষয়গুলি নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। বলা হয়েছে, ‘এজন্য সবার আগে নানা ইস্যুতে রাজ্য সরকারগুলিকে সন্তুষ্ট করা জরুরি।’
কমিটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছিল, নতুন কোনও তথ্য না নিয়ে আধার তথ্যকে কাজে লাগিয়ে এনপিআর সম্ভব কি? মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘এনপিআর তৈরি হয়নি, সাম্প্রতিকীকরণ করা হচ্ছে মাত্র। প্রতিটি পরিবারে না গিয়ে শুধুমাত্র আধার তথ্যের ভিত্তিতে এই কাজ সম্ভব নয়। কারণ, সরকার পরিবারভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করতে চায়। আধার ব্যক্তিভিত্তিক তথ্য।’
মন্ত্রকের এই জবাবে কমিটি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তারা আধার নম্বরের ব্যবহার করে এনপিআর ও জনগণনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরামর্শ দিয়েছে। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে স্ট্যান্ডিং কমিটির পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘জনগণনা ও জাতীয় জনপঞ্জি নিয়ে গোটা দেশে প্রবল অসন্তোষ ও ভয়ের সঞ্চার হয়েছে।’ কমিটি মনে করছে, এনপিআর নিয়ে গত কয়েক মাসে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চলেছে।
জনগণনার আগে এনপিআর-এর কাজ শুরু হওয়ার কথা আগামী ১ এপ্রিল থেকে। চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তারপর আগামী বছর জনগণনার কাজ শুরু হবে। কিন্তু, বিরোধী-শাসিত বাংলা-কেরালা স্পষ্টতই অসম্মতির কথা জানিয়ে দিয়েছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, এনপিআর আসলে এনআরসির পূর্ব-প্রক্রিয়া। এনপিআরে নতুন প্রশ্নমালা (যেমন বাবা-মায়ের জন্মস্থান) নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান নানা মহল।