পূর্বের নেওয়া সিদ্ধান্ত মতো মাসখানেকের মধ্যেই শুরু হয়ে যাওয়ার কথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার বা এনপিআর তৈরির কাজ৷ যে জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসাধারণের থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা৷ কিন্তু জনগণের থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কী কী প্রশ্ন করবেন তাঁরা, কোন কোন নথি দেখতে চাইবেন এবং কোন কোন নথির প্রতিরূপ সংগ্রহ করবেন, গোটা প্রক্রিয়া শুরুর চার সপ্তাহ আগেও তা নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রাখল মোদী সরকার৷ তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের করা প্রশ্নের উত্তরে বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই রাজ্যসভায় লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ঘরে ঘরে গিয়ে যখন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা এনপিআর সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবেন তখন কাউকে কোনও নথি প্রদান করতে হবে না৷
তবে সমস্যা অন্য জায়গায়৷ কারণ একইসঙ্গে মন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী জনগণের জনসংখ্যা এবং অন্যান্য বিষয়ের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করবেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা৷ এখানেই প্রশ্ন উঠছে, নথি না দেখালে কীভাবে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরবে দেশের জনগণ? কীসের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হবে সেই তথ্য? মুখে মুখে দেওয়া এই তথ্য ভুল প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদানকারীকে আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে, সেই আশঙ্কাও থাকছে৷ শান্তনুর অভিযোগ, ‘নিজেদের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্ট না-করে সরকার আসলে এনপিআর নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রাখতে চাইছে, সেই কারণেই চূড়ান্ত প্রশ্ন তালিকা নিয়ে কোনও তথ্য প্রদান করা হচ্ছে না৷ এর ফলে আবালবৃদ্ধবনিতা অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে৷’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বুধবার কেন্দ্রীয় সরকার লিখিত ভাবে জানিয়েছে, এনপিআর পদ্ধতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নাবালকদের যাবতীয় তথ্যও সংগ্রহ করা হবে৷ এই বিষয়টি নিয়েও সরকারকে নিশানা করেছেন তৃণমূল সাংসদ৷ তাঁর কথায়, ‘একজন নাবালক কীভাবে নিজের যাবতীয় তথ্য প্রদান করবে? একটি শিশু কীভাবে জানাবে তার জন্ম কোথায় হয়েছিল? এই সংক্রান্ত পুরো তথ্য প্রদানের দায়িত্ব থাকবে সংশ্লিষ্ট নাবালকের অভিভাবকের উপরেই৷ যখন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা তথ্য সংগ্রহ করার জন্য এদের বাড়িতে যাবেন, সেই মুহূর্তে একজন অভিভাবকের কাছে যদি সংশ্লিষ্ট নাবালকের যাবতীয় তথ্য মজুত না থাকে, তাহলে কী হবে?’
শান্তনুর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে, কিন্তু কোনও নথি প্রদান করতে হবে না৷ তাহলে কীসের ভিত্তিতে তথ্য দেবেন জনগণ? কেউ মুখে মুখে তাঁর বাবা-ঠাকুর্দার জন্ম তারিখ মুখস্থ বলতে পারবেন? কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাঁরা, তা বলতে পারবেন? এমন অনেক বয়স্ক লোক আছেন, যাঁরা নিজেদের জন্মতারিখ ঠিকঠাক বলতে পারবেন না, আবার জন্ম সংক্রান্ত কোনও কাগজও দেখাতে পারবেন না৷ তাঁদের বেলায় কী করবে সরকার? সেই বিষয়ে কোনও কথা বলা হয়নি৷’ সরকারের এই ঘোষণার ফলে সাধারণ মানুষের মনে আরও বেশি করে ধোঁয়াশা তৈরি হবে৷ তাঁদের সমস্যা বাড়বে বই কমবে না৷ মত শান্তনুর।