জন্মলগ্ন থেকেই হিন্দু রাষ্ট্রের দাবি তুলে আসছে বিজেপি। ক্ষমতা ধরে রাখতেও বারবারই ধর্মীয় মেরুকরণ এবং ভাগাভাগির রাজনীতি করে এসেছে মোদী-শাহদের দল। যে কারণে বারবারই গেরুয়া শিবিরের দিকে আঙুল উঠেছে মুসলিম বিরোধীতার। ভিসা নীতিতেও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য হওয়াতে ফের প্রকাশ্যে মোদী সরকারের মুসলিম বিদ্বেষ। দেশের নতুন ভিসা নিয়মে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যাগুরু মুসলিম নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ শেষ হলে গুনতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের জরিমানা। কিন্তু হিন্দু-সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের জরিমানা যৎসামান্য।
বছরখানেক আগে দেশের ভিসা–নিয়মে পরিবর্তন এনেছে মোদি সরকার। এতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মুসলিম নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ পেরোলে জরিমানা ২০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস’–এর ওয়েবসাইটে ঘোষিত নতুন নিয়মে ‘পেনাল্টি অফ ওভারস্টে ফর মাইনরিটি কমিনিউনিটিজ ফ্রম পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান’–এ বলা হয়েছে, ভিসা অতিক্রমের মেয়াদ ৯০ দিনের কম হলে ১০০ টাকা জরিমানা ধার্য হবে। মেয়াদ অতিক্রমের সময় ৯১ দিন থেকে ২ বছরের মধ্যে হলে জরিমানা হবে ২০০ টাকা। ২ বছরের বেশি হলে জরিমানা ৫০০ টাকা। এক্ষেত্রে মুসলিম-প্রধান ওই দেশগুলির ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে হিন্দু–সহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের কথাই বলা হয়েছে। অন্যদিকে, সংখ্যালঘু ছাড়া অন্য সম্প্রদায়ের নাগরিকদের একই কারণে জরিমানা দিতে হবে ৯০ দিনের জন্য ২১,০০০ টাকা। ৯১ দিন থেকে ২ বছরের জন্য দিতে হবে ২৮,০০০ টাকা। এবং ২ বছরের বেশি মেয়াদ-উত্তীর্ণ ভিসার জন্য দিতে হবে ৩৫,০০০ টাকা।
উল্লেখ্য, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করে পড়শি দেশের নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য মোদী সরকারের তৈরি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ নিয়ে আদৌ খুশি নয় বাংলাদেশ৷ ঠারেঠোরে বেশ কয়েক বার তাদের আপত্তির কথা প্রকাশও করেছে শেখ হাসিনার সরকার৷ আর নয়া ভিসা নিয়মে বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে এক আসনে বসানোয় ফের চটেছে তারা। বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ওপেনার সইফ হাসান তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে দু’দিন থেকে গিয়েছিলেন।কলকাতার ক্রিকেট ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর দেশে ফেরার সময় নতুন ভিসা–নীতি অনুযায়ী কলকাতা বিমানবন্দরে সইফের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ ২১,৬০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।’
এখানেই আপত্তি তুলেছে বাংলাদেশ। দূতাবাসের এক আধিকারিকের কথায়, ‘ক্রিকেটারদের নানা দেশে ঘুরে বেড়াতে হয়। অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তি চিকিৎসা ও ব্যক্তিগত কারণে ভারতে আসেন। ধরুন, সইফ হাসান ও লিটন দাস ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ভারতে রয়ে গেছেন। দেখা গেল, সইফ মুসলিম বলে তাঁকে ২১,০০০ টাকা জরিমানা করা হল, আর লিটনের কাছ থেকে নেওয়া হল মাত্র ১০০ টাকা। কারণ, তিনি হিন্দু। কোনও উন্নত দেশে এমন ধর্মীয় বৈষম্যমূলক নীতি কি থাকতে পারে?’ দিল্লীর বাংলাদেশ দূতাবাসের এক আধিকারিকের প্রশ্ন, ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী নতুন নয়। ঐতিহাসিক কারণে এই দুই দেশ চিরকাল বন্ধুত্বে আবদ্ধ। কোন যুক্তিতে বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে এক আসনে বসানো হয়েছে?’