রংয়ের উৎসবের রেশ থাকতে থাকতেই সবুজ-মেরুন আবিরে রঙিন হয়ে যেতে পারে আকাশ। আজ, কল্যাণীতে চেন্নাই সিটি এফসির বিরুদ্ধে তিনটে পয়েন্ট তুলে রাখতে পারলে আগামী মঙ্গলবার আইজল ম্যাচ জেতার আগেও আই লিগের খেতাব নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে কিবুর টিমের।
ময়দান জুড়ে পলাশ আর শিমুলের ছড়াছড়ি। কোকিলের ডাক শোনা যাচ্ছে ইডেনের আশেপাশে। দরজায় কড়া নাড়ছে রঙের উৎসব। একশো তিরিশ বছরের ক্লাবে ঢুকলে অজান্তেই মনে হয় প্রকৃতি বাজিয়ে চলেছে, ‘বসন্ত এসে গেছে’ গান। ক্লাব তাঁবুর বারান্দায় সকালের রোদ্দুরে ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ গন্ধও হাজির। প্রতিপক্ষ দলের কোচ ম্যাচের আগেই অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন। তাতে কী! মোহনবাগানের পেশাদার স্পেনীয় কোচ যে এখনও দরজা বন্ধ করে রেখেছেন ড্রেসিংরুমের। সেখানকার পরিবেশে আই লিগের প্রথম ম্যাচের মতোই মেজাজ। গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিন সকালে এবং বিকেলে কিবু এবং তাঁর বাহিনীকে দেখে মনে হচ্ছে, আজ কল্যাণীতে ম্যাচ না জিতলেই খেতাব হাতছাড়া হয়ে যাবে। কিবুর কথাতেও তারই প্রতিধ্বনি, ‘‘ড্রেসিংরুমে ছেলেদের বারবার সতর্ক করছি, একটা ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট মানে কিন্তু প্রতিপক্ষ তোমাদের ঘাড়ে এসে উঠবে।’’ বলার সময় পাপা জিয়োহারাদের কোচের মুখাবয়বে চূড়ান্ত সতর্কতা।
মোহনবাগানের সাফল্যের পিছনে শুধু যে টিম গেম, তা নয়। সব পজিশনে নেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় চাপ কাটিয়ে ম্যাচ জিততে পারছে কিবুর টিম। বাবা যেমন গোল পাচ্ছেন, তেমনই ফ্রান গঞ্জালেস, ফ্রান মোরান্তেরাও গোল এনে দিচ্ছেন টিমকে। তবু চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে সতর্ক কিবু। বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার জেতার লক্ষ্য নিয়েই নামব আমরা। যাতে লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা যায়। তবে, চেন্নাই কিন্তু ঘরের মাঠে বিরুদ্ধে ভালো খেলেছিল। বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেছিল। এটুকু বলতে পারি, কঠিন ম্যাচ হবে।’ এই ম্যাচেও খেলতে পারবেন না ডিফেন্ডার ড্যানিয়েল সাইরাস। তিনি ম্যাচ ফিট নন। টারসুনভের কার্ড সমস্যা আছে। তাই এক বিদেশি কম নিয়েই খেলতে হবে কিবুকে।
অনুশীলনে টারসুনভের জায়গায় মাঝমাঠে রোমারিও জেসুরাজকে রেখে রণনীতি তৈরি করতে ব্যস্ত থাকলেন সবুজ-মেরুন কোচ। সেট-পিস থেকে পেনাল্টি কিক অনুশীলন, ছোট মাঠ করে পাসিং দক্ষতা বড়ানোর পাঠ, কিছুই বাদ গেল না দেড় ঘণ্টার অনুশীলনে। কিবুর গলাতেও নতুনত্ব নেই, ‘‘চেন্নাই খুব শক্তশালী দল। কাতসুমির মতো গতিময় ফুটবলার আছে। পজেশনাল ফুটবল খেলে। কঠিন ম্যাচ। জেতা সহজ হবে না।’’
চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে কার্যত সেমিফাইনাল খেলতে নামছেন জোসেবা বেইতিয়া, ফ্রান গঞ্জালেসরা। গত বার চ্যাম্পিয়ন হলেও এ বারের লিগে আকবর নওয়াজের টিমের হাল খুব খারাপ। শুরুতে পর পর হার ও ড্রয়ের জন্য খেতাবের লড়াই থেকে সরে গিয়েছে চেন্নাই। তবু ১৪ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট থাকা টিম মরিয়া কামড় দিতে চাইছে মোহনবাগানকে।
মোহনবাগান টানা বারো ম্যাচ অপরাজিত। আই লিগের সর্বাধিক গোল (৩৩) পাপা-ফ্রান গঞ্জালেসরাই করেছেন। এই দলকে হারানোর ক্ষমতা কি আপনাদের আছে? প্রশ্ন শুনে চেন্নাই কোচ হেসে ফেলেন। বলেন, ‘‘সেটাই তো আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। যে ক্লাব দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের চেয়ে বারো পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে, তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমাদের লক্ষ্য সেটা কয়েক দিন পিছিয়ে দেওয়া। লিগ শীর্ষে থাকা দলকে হারানোই আমাদের মোটিভেশন,’’ কোনও রাখঢাক না করেই বলে দেন আকবর।