সিএএ নিয়ে অরাজকতা সারাদেশে জ্বলছে রাজধানী দিল্লী। নিহত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে সাম্প্রদায়িক হিংসা। গোটা ঘটনায় ভীষণই ক্ষুব্ধ টলি পাড়ার পরিচিত অভিনেত্রী ও ‘সত্যমেব জয়তে’-র শাশুড়ি সুভদ্রা চক্রবর্তী। মোদি সরকারের প্রতিশ্রুতিতে তিনি বিজেপি যোগ দিলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে মোদি সরকার সেই প্রতিশ্রুতি থেকে অনেকটাই সরে যাচ্ছে।
মানুষের যেটুকু প্রাপ্য সম্মান পাওয়া উচিত তার বিন্দুমাত্রও পাচ্ছে না। এখানে সম্মানের বড় অভাব। কাল দিল্লি হচ্ছে, আজ কলকাতায়,আর কেউই ছাড় পাব না। সবাই হিংসার বলি হব। এভাবেই চলতে থাকবে হিংসার সমাজ। তিনি রাজনীতির এই কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির খেলায় থাকতে চান না। এছাড়া একটি গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন অভিনেত্রী। তিনি জানিয়েছেন, তার মতোন অনেকেই বিজেপির উপর বীতশ্রদ্ধ।
আজ তিনি ছেড়েছেন কাল হয়তো অন্য কেউ দল ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। সুতরাং টলিপাড়ার গেরুয়া শিবিরে যে ভাঙন ধরতে চলেছে তা যেন একপ্রকার নিশ্চিত জানালেন অভিনেত্রী। এ বিষয়ে সুভদ্রা চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি থেকে পদত্যাগ করা নিয়ে প্রথমে টুইট করেন তিনি। এরপর ইমেল করে পাঠিয়ে দেন নিজের পদত্যাগ পত্র।
অভিনেত্রী আরও বলেন, “অনেক আশা নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর স্লোগান শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।” তাঁর কথায়, মোদীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর, কাজ করবেন বলে তিনি ছটপট করতেন। মানুষের জন্য কিছু করবেন বলে তাঁর বার বার মনে হলেও, চুপচাপ বসে থাকতে হয়েছে তাঁকে। সুভদ্রা জানান, পদের লোভে বিজেপিতে যোগ দেননি। তাই গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার পর বার বার মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের জন্য কাজ করার কথা বলেও, তাঁকে নিষ্পৃহ করে রাখা হয়েছে। এসবের পাশাপাশি বর্তমানে যা শুরু হয়েছে, তাতে এই দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার ইচ্ছা চলে যায় বলে জানান তিনি।
এসবের সঙ্গে যুক্ত হয় দিল্লির হিংসার বিষয়টি। যেখানে ধর্মে ধর্মের হানাহানির জেরে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেন দেশের মানুষ নিজেদের মধ্যে লড়াই করবেন ধর্মের নামে, এমন প্রশ্ন তোলেন সুভদ্রা চক্রবর্তী। সেই সঙ্গে কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুরদের যে সব কুরুচিকর মন্তব্য, তা মেনে নেওয়া যায় না। নিজের ভিতরে যে বিবেক রয়েছে, সেই বিবেকের কাছে কী জবাব দেবেন, দিল্লির ঘটনার পর এমন প্রশ্নই বার বার মনে আসতে শুরু করে বলে জানান অভিনেত্রী।
শুধু তাই নয়, বর্তমানে কেউ যদি কিছু বলতে যাচ্ছেন, তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ বলে কেন দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও প্রশ্ন তোলেন টেলিভিশনের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। মোদীজি দেশের জন্য ভাবেন, এই কথা মনে করেই তাঁর মতো অনেক মানুষ গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে ভারতীয় জনতা পার্টির কাছ থেকে মানুষ কী পেয়েছেন। বর্তমানে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের নামে ভারতের প্রতিটি মানুষের মাথার উপর তলোয়ার ঝুলছে বলেও মন্তব্য করেন সুভদ্রা চক্রবর্তী।
এসবের পাশাপাশি অমিত শাহের কলকাতায় সভার জন্য সংগঠিত মিছিলে ‘গোলি মারো’ স্লোগান নিয়েও তীব্র বিরোধিতা করেন সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, যে ‘গোলি মারো’ স্লোগান নিয়ে জোর শোরগোল শুরু হয়, সেই স্লোগানই আবার নতুন করে কীভাবে উঠল খাস কলকাতায়! ওই মিছিলে যে বা যাঁরা ‘গোলি মারো’ স্লোগান তোলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন সংশ্লিষ্ট দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইচ্ছা নদী-খ্যাত অভিনেত্রী। পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টি হিংসার বীজ বপন করছে বলেও অভিযোগ করেন অভিনেত্রী।
ভারতীয় জনতা পার্টি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তিনি কি অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় যেতে চলেছেন! এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিনেত্রী জানান, তাঁর কাছে প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু ভেবে উঠতে পারেননি। এবার তিনি সময় চান। সঠিক চিন্তা ভাবনা করে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান টেলিভিশনের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী।