লম্বা টানাপোড়েনের পর অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবানদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হল বহু প্রতীক্ষিত শান্তি চুক্তি। শনিবার এই ঐতিহাসিক চুক্তির পর শেষ হল আমেরিকা ও তালিবানদের মধ্যে দীর্ঘতম যুদ্ধ। এই চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত বাহিনী সরিয়ে নেবে। তবে সন্ত্রাসবিরোধী শর্ত মানলে তবেই সেনা সরিয়ে নেবে আমেরিকা।
শনিবার এই চুক্তির ফলে আমেরিকা-তালিবানদের মধ্যে দীর্ঘ ১৮ বছরের সংঘর্ষের সমাপ্তি হল। দীর্ঘ এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আমূল পরিবর্তন হয়েছে আফগানিস্তানের। ৯/১১ হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আফগানিস্তানে সেনা অভিযানের নির্দেশ দেন। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের পর বিশ্বের মানচিত্রে সন্ত্রাসের নয়া সংজ্ঞা তৈরি করে তালিবানরা। যাদের একমাত্র শত্রু ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারই পালটা দিতে আফগানিস্তানে সেনা অভিযান করে আমেরিকা। মার্কিন অভিযানের পর বদলে যায় আফগানিস্তানের পরিস্থিতি।
কয়েক মাসের মধ্যে মার্কিন সেনা অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়দা ও তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠী। যা তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে পাক সীমান্তের দিকে ঠেলে দেয়। যদিও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। তালিবানমুক্ত নয়া আফগানিস্তান গড়তে ময়দানে নামে পেন্টাগন। কূটনেতিক ও আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে আফগানিস্তানে স্থায়ী সরকার গড়তে সাহায্য করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানরা ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে আমেরিকার হাত ধরে।
তবে ভাঙলেও মচকায় না তালিবানরা। লাদেন খতম হওয়ার পরও সংঘর্ষ জারি রাখে মার্কিন সেনার বিরুদ্ধে। গেরিলা যুদ্ধে বারবার মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা চালায় তালিবানরা। তাই আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন বাড়ায় আমেরিকা। দীর্ঘ ১৮ বছরের সংঘর্ষে মার্কিন কোষাগার থেকে খসেছে ৭৫,০০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের জন্য পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং বর্তমানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেশবাসীর কাছে কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে। যুদ্ধের পিছনে এত খরচ আর কতদিন? প্রশ্নে জেরবার হয়েছে হোয়াইট হাউজ। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে অনন্তকাল ধরা চলা যুদ্ধ শেষ করার জন্য দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যার শুরুয়াত সিরিয়া-ইরাক থেকে করে আমেরিকা। এবার তালিবানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে আফগানিস্তান থেকেও সেনা সরানোর জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হল আমেরিকা।
এ দিন চুক্তি সই হওয়ার আগে যোদ্ধাদের উদ্দেশে কড়া নির্দেশ ছিল তালিবানি শীর্ষনেতৃত্বের, ‘দেশের শান্তির কথা ভেবে সব ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকুন।’ পরে ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দরকষাকষির সময় আমেরিকা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা মেনে চলবে।’
প্রতিশ্রুতি মেনে চলার কথা অবশ্য তালিবানকেও মনে করিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। এ দিন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো দোহার ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই বলেন, ‘আল কায়দার সঙ্গে যোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে যে কথা আপনারা দিয়েছেন, তা কিন্তু মনে রাখবেন।’ শান্তিচুক্তি সই হওয়ার ঠিক আগের দিনই কার্যত এক বার্তা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছিলেন, ‘যদি তালিবান এবং আফগান সরকার তাদের কথা রাখে, তা হলে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ করে সেনাবাহিনী ফেরানোর জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হবে।’