ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রদায়িক নীতি নিয়ে গণবিক্ষোভ গোটা একটি এলাকার জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছে। বাড়িয়ে তুলেছে ধর্মীয় বিভাজন, মৃত্যুমিছিল। দিল্লীর হিংসার খবর চাউর হওয়ার পর থেকে ঠিক এই ভাষাতেই মোদীর সমালোচনায় করতে দেখা গিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টের মত আমেরিকার সংবাদ মাধ্যমগুলিকে। সরব হয়েছিলেন একঝাঁক মার্কিন রাজনীতিক। গোটা ঘটনায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশনও। এবার সরাসরি মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে মোদী সরকারকে নিশানা করে কটাক্ষ ধেয়ে এল।
মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্রের কথায়, ‘আমরা এই হিংসার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, শান্তিপূর্ণ অবস্থানের অধিকারকে সম্মান করুন। পাশাপাশি, যারা হিংসা ছড়িয়েছে, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত পক্ষকে একজোট হয়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে হিংসাকে বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’ শুধু তাই নয়। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে দিল্লী নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেস (আইওসি), দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস-এর মতো সংগঠনগুলিও।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন ধরেই রীতিমতো তেতে রয়েছে দিল্লীর পরিবেশ। উত্তর-পূর্ব দিল্লীতে সিএএ বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে কমপক্ষে ৪২ জনের। জখম কমপক্ষে ২০০। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের ওই মুখপাত্র বলেন, ‘এই ইস্যুতে আমরা নয়াদিল্লীর সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছি। ভবিষ্যতেও ধর্মীয় স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে এই আলোচনা চলবে।’ এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর চলাকালীনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দিল্লী। কিন্তু, ভারতে থাকাকালীন বা দেশে ফিরেও দিল্লীর হিংসা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি ট্রাম্প। যা নিয়ে নিজের দেশেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে।
ডেমোক্র্যাট নেতা বব মেনেন্ডেজ দিল্লী নিয়ে ‘প্রকাশ্যে উদ্বেগপ্রকাশ’ না করার জন্য ট্রাম্পকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকারের পক্ষে আওয়াজ তুলতে আমেরিকাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে। আমি ট্রাম্প প্রশাসন এবং অন্য দেশগুলির কাছে আর্জি জানাচ্ছি, দিল্লীর হিংসার তীব্র প্রতিবাদ করুন এবং ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে ভারত সরকারের উপর চাপ বাড়ান।’ আর মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য, ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রমীলা জয়পাল টুইটারে লেখেন— ‘ভারতের চলতি সন্ত্রাস আসলে নেতৃত্বের ব্যর্থতা। সেখানে মানবাধিকার সঙ্কটে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই হবে।’