শুক্রবার ৫৩ দিনে পড়ে কলকাতার ‘শাহিনবাগ’ পার্ক সার্কাসের ধর্না। আর সেইদিনই সেখানে হাজির হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক দিলেন জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী এবং সংবিধান-প্রণেতা বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের উত্তরসূরিরা। গতকাল পার্ক সার্কাসের সিএএ-এনআরসি বিরোধী ধর্নামঞ্চে দাঁড়িয়ে গান্ধী এবং আম্বেদকরের প্রপৌত্র- যথাক্রমে তুষার গান্ধী ও আম্বেদকরের নাতি রাজ রতন আম্বেদকর জানান, সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অভিসন্ধি’তে খুবই উদ্বিগ্ন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, জামিয়া-মিলিয়া-ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর তীব্র আক্রমণের পরই দিল্লীর শাহিনবাগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের সুরেই পার্ক সার্কাস ময়দানে ধর্নায় বসেন মুসলমান মহিলারা। গতকাল সেই ধর্নার ৫৩ তম দিনে উপস্থিত হয়ে তুষার বলেন, ‘দেশ বাঁচাতে আজ মা-বোনেরা রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন দেশের গরিব, দলিত মানুষের বিপক্ষে।’ বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর তোপ, ‘দেশে বিভাজনের রাজনীতি করে গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করতে চাইছে বিজেপি। এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে। সিএএ-এনআরসির ফলে শুধু মুসলিমদের নয়, দেশের সব ধর্মের মানুষকেই সমস্যায় পড়তে হবে।’
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ভূয়সী প্রশংসা করে তুষার বলেন, ‘রাস্তায় নেমে মমতা লাগাতার সিএএ-এনআরসির বিরোধিতা করে চলেছেন।’ তিনি এ-ও বলেন যে, ‘আপনারা ভাগ্যবান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী। ওঁরা মমতাকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করবে। আপনারা দয়া করে ওঁকে সমর্থন করুন।’ অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘মানসিক রোগী’ বলে কটাক্ষ করে রাজ রতন আম্বেদকর বলেন, মুসলমান বিদ্বেষই মোদীর মানসিক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু তাই নয়। কড়া ভাষায় বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মাথায় রাখবেন, এটা শুধু সিএএ-এনআরসির বিষয় নয়। দিল্লীর মসনদ থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে হবে আমাদের। না-হলে প্রতিদিনই ওরা কিছু না কিছু নিয়ম চালু করবে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলার জন্য।’ গণতান্ত্রিক পথে সিএএ-বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নানা ভাবে বিজেপি প্ররোচিত করার চেষ্টা করবে। সেই ফাঁদে পা দেওয়া চলবে না। মানুষের সামনে সঙ্ঘ পরিবারের মুখোশ খুলে দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার পার্ক সার্কাস ময়দানে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআরের বিরোধিতায় একটি জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেই জনসভাতেই উপস্থিত হয়েছিলেন তুষার গান্ধী, রাজ রতন আম্বেদকররা। ছিলেন শাহিনবাগের ‘দাদি’ও। মল্লিকবাজার থেকে মিছিল করে সভামঞ্চে হাজির হন দিল্লী থেকে আসা এই অতিথি বক্তারা। এছাড়াও জনসভায় বক্তৃতা দেন নাখোদা মসজিদের ইমাম শফিক কাশিম, শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সর্দার অজিত সিং-সহ আরও অনেকে। নিজেদের বক্তব্যের মাধ্যমে নয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ করেন তাঁরা। সভামঞ্চ থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন প্রত্যেকে।