নাম ছিল ‘মদের গলি’, হয়ে গেল ‘সারদা পল্লী’। লোকে ডাকতো পিতল পাড়া, এবার থেকে বলতে হবে ‘বিবেকানন্দ পল্লী’। একই রকম ভাবে যা ছিল মাড়োয়ারী বাগান, সেটাই হয়ে গিয়েছে রামকৃষ্ণ পল্লী। এ ভোল বদল ঘটেছে খাস কলকাতার বুকে তিনটি বস্তি এলাকায়। আর এই নতুন ভাবে কোনও বস্তির নামকরণ যে কলকাতা পুরনিগমের ইতিহাসে প্রথম সে কথাও এখন জানাতে ভুলছেন না পুরনিগমের বস্তি উন্নয়নের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার। আগামী রবিবার কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম এই তিন বস্তির নতুন দ্বার উদ্বোধন করবেন। পুরনির্বাচনের প্রাক্কালে খাস বাংলার রাজধানীর বুকে এই বসতির উন্নয়ন যে শাসক দলের কাছে বাড়তি অক্সিজেন পৌঁছে দেবে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কলকাতার বুকে বস্তি এলাকার এই উন্নয়ন যে পুরনির্বাচনে শাসক দলের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে পুরনিগমের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের কথায়। তাঁর দাবি, ‘মনীষীদের নামে বস্তির নামকরণ এটাই প্রথম উদ্যোগ। আগামী দিনে এই পুরবোর্ড যদি ফিরেও আসে আর আমি যদি ফের বস্তি বিভাগের দায়িত্ব পাই, শহরের সব বস্তিরই কোন বরেণ্য ব্যক্তি বা মহাপুরুষের নামে নামকরণ করব। সেই ইচ্ছা আমার রয়েছে। এতে একদিকে যেমন বস্তি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাবে, অন্যদিকে বস্তিবাসী বিশেষ করে বস্তির ছেলেমেয়েদের মনে মহাপুরুষ, বরেণ্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানার ইচ্ছাও জন্মাবে।’
স্বপনবাবুর এই দাবি যে নেহাত মুখের কথা নয় তা কিন্তু খাস কলকাতার বসিন্দারাও স্বীকার করেন। ইতিমধ্যেই পূর্ব কলকাতার হাটগাছিয়া বস্তিকে দেশের প্ৰথম মডেল বস্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে কলকাতা পুরনিগম। চলতি আর্থিক বছরে শহরে বস্তি উন্নয়নে ৩২১ কোটি টাকার উপর অর্থ খরচ করা হয়েছে, যা এককথায় রেকর্ড বলেই মনে করা হচ্ছে। ৪০০ এর উপরে বস্তি রয়েছে কলকাতায়। সেই সব বস্তির ভোল বদলের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ড শেষ পাঁচ বছর শহরের বস্তিবাসীদের মানোন্নয়নেও বিরাট ভূমিকা পালন করেছে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
জানা গিয়েছে, উত্তর কলকাতায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ‘২১৮ মানিকতলা মেইন রোড’ ঠিকানাটি আদতে একটি বস্তি এলাকার। এতদিন লোকে সেই বস্তিকে মদের গলি বলেই চিনত। কিন্তু সরকারি ভাবে এবার থেকে সেই গলিরই নতুন নামকরণ করা হচ্ছে ‘সারদা পল্লী’ নামে। তাই বস্তির মুখেই বসছে মা সারদার মূর্তি সহ নতুন তোরণ। রবিবার তারই উদ্বোধন করবেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আবার ‘২২৩ মানিকতলা মেইন রোড’ ও ‘২২৭ মানিকতলা মেইন রোড’ যা ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই পড়ে তারও নতুন নামকরণ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথমটিকে লোকে চিনত মাড়োয়ারী বাগান নামে, এরই নতুন নাম হচ্ছে রামকৃষ্ণ পল্লী। বস্তিতে ঢোকার মুখেই বসে গিয়েছে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের আবক্ষমূর্তি। তৈরি হয়েছে তোরণও। রবিবারই হবে মেয়রের হাতে এর উদ্বোধন। একই সঙ্গে ‘২২৭ মানিকতলা মেইন রোড’ যা লোকে পিতল পাড়া বলে চিনত তার নাম হচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দের নামে ‘বিবেকানন্দ পল্লী’। এরও প্রবেশদ্বার হচ্ছে, বসছে স্বামীজির মূর্তিও।