একটু একটু করে শান্ত হচ্ছে উত্তপ্ত দিল্লী৷ রবিবার বা সোমবার দিল্লীর ব্রহ্মপুরী এলাকার চেহারা একেবারেই অন্যরকম ছিল৷ রাস্তার একধারে হিন্দুদের বাড়ি অন্যদিকে মুসলিমদের বাড়ি৷ ঘটনার পর থেকে দু’দিকের বাড়ির লোকেরাই ক্রমাগত একে অপরকে সন্দেহর চোখে দেখছিলেন৷ কিন্তু আজ হঠাৎ এলাকার চেহারাটা পাল্টে গেল৷ এলাকায় এল ত্রাণ। হিন্দু-মুসলিম বিভেদ ভুলে তা নিতে এলেন সকলে।
আক্রান্ত এলাকায় এতদিন সব কিছুই ছিল দুর্লভ৷ আজ দল বেঁধে এলেন গুরদ্বারের সদস্যরা৷ এলেন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক৷ আর যন্ত্রণার জীবন থেকে মুক্তি পেতে সাধারণ মানুষ দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন বাইরে৷ হিন্দু মুসলমান ভেদ ভুলে সবাই এগিয়ে এলেন সাহায্যের আশায়৷ কেউ হয়ত অসুস্থ, কেউ খাবারের আশায় এসে ভিড় করলেন৷
শুধু অ্যাম্বুলেন্স নয়, খাবার ভর্তি ট্রাক এদিন পৌঁছে গিয়েছে গোন্দা, আম্বেদকর বস্তি, ব্রহ্মপুরী, শ্রীরাম কলোনিতে পৌঁছে গিয়েছে৷ দোরে দোরে গিয়ে তাঁরা জিজ্ঞাসা করছেন, ‘আপনাদের কী খাবার দরকার৷ বাড়িতে খাবারের অভাব থাকলে আমাদের বলুন, আমরা পৌঁছে দেব৷’ এমনিভাবে সকাল ৬ থেকে ৭০০ জনের মতো মানুষকে সাহায্য করেছে এই সাহায্যকারী দল৷ একজন চিকিৎসকও এই দলের সঙ্গে ঘুরছেন, চিকিৎসার কাজের জন্য৷ এক শিখ ভাই হাতে হাতে তুলে দিচ্ছেন খাবার৷ তাঁরা জানালেন, ‘যাঁরা দিনমজুর, তাঁরা শেষ কয়েকদিন ধরে একটা টাকাও উপার্জন করতে পারেননি৷ তাঁদের বাড়িতে খাবার নেই৷ আমরা তাঁদের হাতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি৷’
ইয়াসমিন আসিফ (৩৫) হিংসার সময় আটকে পড়েছিলেন আগুন মধ্যে৷ আগে থেকেই তাঁর শরীরে দানা বেঁধে ছিল নিঃশ্বাসের কষ্ট৷ সেদিন ধোঁয়ায়, আগুনে আরও শরীর খারাপ হয় তাঁর৷ এদিন অ্যাম্বুলেন্স দেখে চিকিৎসার আশায় এগিয়ে এলেন তিনি৷ ২৯ বছরের গজিন্দরও শেষ তিন দিন ধরে পায়ের যন্ত্রণায় কাতর৷ কিন্তু এমন ঝামেলা চলছিল যে বাইরে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর কোনও সুযোগ পাননি৷ এদিন তিনিও এলেন ইয়াসমিনের পাশে৷ তিনি বললেন, ‘এতদিন পর আমি ওষুধ পেলাম৷ এখন আমিও ওঁদের সাহায্য করছি যাতে এই ত্রাণের কাজ ভাল ভাবে হয়৷’