১২ মার্চ থেকে এ বার শুরু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। খড়দহের পাতুলিয়ার বছর উনিশের শেখ সাহিলের অবশ্য আর এ বার সেই পরীক্ষায় বসা হচ্ছে না। সাহিল তাঁর বাড়ির অভিভাবকদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পরীক্ষায় বসবেন না। কারণ সাহিলের সামনে এখন অন্য পরীক্ষা জেতার স্বপ্ন। মোহনবাগানকে আইলিগ জেতানোর স্বপ্ন।
যদি এবার মোহনবাগান আই লিগ জিতে যেতে পারে তাহলে শুধু মোহনবাগানের নয়, এ বার আই লিগের সেরা আবিষ্কার হবেন তিনিই। সবুজ মেরুনের কোচ কিবুর টিমে ফ্রান গঞ্জালেস, জোসেবা বেইতিয়ারা মরসুম শুরু থেকে মাঝমাঠের বড় ভরসা হয়ে উঠলেও, তাঁদের পাশে কিন্তু সমান মর্যাদা পাচ্ছেন সাহিল।
বাংলার শেষ দাপুটে ও ধারাবাহিক সাফল্য পাওয়া মিডফিল্ডার মেহতাব হোসেন বলছিলেন, ‘সাহিল খুব সেন্সেবল ফুটবল খেলছে। অনেক কিছুই ওর পজিটিভ। কিন্তু ওকে এখন অনেক দূর যেতে হবে। এক বছর ভালো খেলে মাথা ঘুরে গেলে চলবে না। অন্তত দশ বছর একটানা ভালো খেললে তবে তারকা হবে। সে জন্য এখন মাটিতে পা রেখে কোচের সব পরামর্শ শুনে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
সাহিলের সাফল্য সম্পর্কে দারুণ আশাবাদী তাঁকে ময়দানে তুলে আনা বর্ষীয়ান কোচ অনন্ত ঘোষ। মোহনবাগানের নার্সারি টিমের ট্রায়ালে অনন্তই বেছে নিয়েছিলেন সাহিলকে। আবার অনূর্ধ্ব ১৮ মোহনবাগান টিম থেকে বাদ পড়ার পর অনন্তই তাঁকে মহামেডানে নিয়ে গিয়ে নিয়মিত সুযোগ দিয়ে তৈরি করেন। ২০১৯ য়ে সাহিল মোহনবাগানের যুব টিমে ফিরেই নজর কেড়ে কিবুর টিমে ঢোকেন। তারপর কিবুর ছোঁয়ায় তিনি এখন সিনিয়র টিমের ভরসা। অনন্ত বলছিলেন, ‘আমার টিমে সাহিল ছিল স্টপার। কিবুই ওকে বদলে দিয়েছে। তার উপর শুরুতেই বেইতিয়া, গঞ্জালেসের মতো বড়মাপের ফুটবলারের সঙ্গে মাঝমাঠে খেলার সুযোগ পেয়ে ও এখন অনেক পরিণত।’ অনন্ত না থেমেই জোড়েন, ‘সাহিলকে আমি ছোট্ট থেকে চিনি। খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ ছেলে। তাই ও হারিয়ে যাবে না। আগামী দিনে জাতীয় টিমের তারকা হবেই।’
মোহনবাগানের মাঝমাঠের ঝলমলে চেহারাটা দেখা যাচ্ছে সাহিলের ক্রমাগত নিখুঁত স্ন্যাচিং, চমৎকার অ্যান্টিসিপেশন ও লম্বা পাসিংয়ের সুবাদেই। গঞ্জালেস, বেইতিয়া, বাবাকে ছাড়া কিবু যেমন প্রথম একাদশ ভাবতে পারেন না, তেমনই সাহিলকে বসিয়ে অন্য কাউকে নামানোর কথা ভাবতেই পারছেন না বাগানের স্প্যানিশ কোচ। অনেক বছর পর আই লিগে সবুজ মেরুন জার্সিতে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে প্রায় সব ম্যাচে দাপিয়ে খেলছেন এক বাঙালি। ক’দিন আগে মারগাওয়ে চার্চিলের সঙ্গে ম্যাচ ছিল মোহনবাগানের। গ্যালারিতে ছিলেন জাতীয় কোচ ইগর স্টিম্যাচ। জানা গিয়েছে, জাতীয় টিমের কোচিং স্টাফদের কাছে স্টিমাচ অনেক তথ্য নিয়েছেন সাহিল সম্পর্কে। আই লিগে মিটলেই সাহিলকে যদি জাতীয় শিবিরে ডাকা হয়, তাহলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।