‘ফ্যাসিবাদী শক্তি আসামে বাঙালি নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে’- আসামে বাঙালিদের ভোগান্তি দেখে বারবারই এই অভিযোগ উঠেছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে৷ ইতিমধ্যেই লাখ দুয়েক বাঙালি নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। জেল খাটছেন ৯৮৮ জন। আবার ২৭ জন প্রাণও হারিয়েছেন ডিটেনশন ক্যাম্পে। সবমিলিয়ে আসামের বাঙালিরা চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। তবে এনআরসি নিয়ে ‘তুঘলকি’ নির্দেশিকার পাশাপাশি আসামের বাঙালিদের মধ্যে নতুন করে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে ৬ নম্বর ধারা রূপায়ণ নিয়ে। বিজেপির ‘দ্বিচারিতায়’ অতিষ্ঠ হিন্দু বাঙালিদের অভিযোগ, সীমান্ত পুলিশের মাধ্যমে আসামকে বাঙালিশূন্য করার ষড়যন্ত্র চলছে। বাঙালি-বিদ্বেষী অসমিয়া আধিপত্যবাদীদের হয়ে কাজ করছে সরকার। মদত দিচ্ছে মোদী-শাহ জুটি।
এনআরসি তালিকা থেকে নতুন করে ‘অযোগ্য’ খোঁজার চেষ্টাকে সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা বলে মনে করছেন অসমের বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ চৌধুরি। তাঁর সাফ কথা, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছাড়া এ ধরনের কোনও কাজ করার এক্তিয়ার নেই এনআরসি সমন্বয়কের। পুরোটাই বাঙালি-বিদ্বেষ থেকে করা হচ্ছে। ভাষাগত সংখ্যালঘুদের মতে, অসমিয়া আধিপত্যবাদীদের মন জয় করতে এখন বাঙালিদের চাঁদমারি করা হচ্ছে। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে জেরবার বিজেপি চাইছে বাঙালিনাশা পদক্ষেপের মাধ্যমে অসমিয়াদের মন জয় করতে। তার জন্য হাতিয়ার করা হয়েছে আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারাকে। বাঙালিদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের পাশাপাশি ভিটেমাটি কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বাংলার সঙ্গেই আসামেও বিধানসভা ভোট। কিন্তু এদিকে, রাজ্যে এনআরসি আর সিএএ নিয়ে জেরবার বিজেপি। তার ওপর আসামের হিন্দু বাঙালিদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে সম্প্রতি রাজ্য এনআরসি সমন্বয়ক হিতেশ দেবশর্মার এক নির্দেশে। তিনি ১,৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে প্রকাশিত এনআরসি তালিকার বৈধতা নিয়ে কার্যত প্রশ্ন তুলেছেন। তালিকাভুক্তদের মধ্যে ‘অবৈধ’ নাগরিকদের খুঁজে বের করার নির্দেশ পাঠিয়েছেন তিনি। বিজেপি বহুদিন ধরেই অবশ্য বলে আসছিল, এনআরসি তালিকায় বহু বাংলাদেশির নাম রয়েছে। এবার সেই বক্তব্য শোনা গেল সরকারি আধিকারিকের নির্দেশেও।
বাঙালি-বিদ্বেষের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আগেই ধমক খেয়েছিলেন হিতেশ। এবার প্রতিটি জেলাশাসককে তাঁর ফতোয়া, ‘অবিলম্বে তালিকাভুক্ত অবৈধ নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য জানাতে হবে’। এই সরকারি নির্দেশ বাঙালিদের সর্বনাশের লক্ষ্যেই করা হয়েছে বলে মনে করেন অসম রাজ্য নাগরিক অধিকার সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, নতুন করে এনআরসিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঙালির সর্বনাশ করার জন্য। তিনি বর্ডার পুলিশ আর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নামে বাঙালিদের হয়রানির বিষয়টিও তোলেন। অভিযোগ করেন, আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা রূপায়ণের নামে বাঙালির সর্বস্ব হরণ করার চেষ্টা হচ্ছে আসামে।