আজ আমেদাবাদে মুখোমুখি হয়েছেন দুই দেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধান। আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের নরেন্দ্র মোদী। এদের মধ্যে ট্রাম্পের নীতি ছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ও মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’। তবে বিশ্বায়নের যুগে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের নীতিই ‘অন্তর্মুখী’। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, দু’জনেই আগে নিজের আখের গুছিয়ে নিতে চাইছেন। ফলে দর কষাকষির জেরে আপাতত অধরা প্রস্তাবিত ইন্দো-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি।
ভারতের সঙ্গে ‘ট্রেড ডেফিসিট’ বা বাণিজ্যিক ঘাটতি কমাতে এ দেশে দুগ্ধজাত পণ্য রফতানি করতে বিশেষ জোর দিচ্ছিল আমেরিকা। তবে ভারত সাফ জানিয়েছে, কয়েকটি শর্ত না মানলে মার্কিন দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য দেশের বাজার খোলা হবে না। নয়াদিল্লীর পক্ষ জানানো হয় যে, আমেরিকার গবাদি পশু অনেক ক্ষেত্রেই আমিষ খাদ্য গ্রহণ করে। ফলে সেই গবাদি পশুর দুধও আমিষ বলে বিবেচিত হবে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই মার্কিন দুধ ‘নিরামিষ’ বলে সে দেশের পশুপালন আধিকারিকরা শংসাপত্র দিলেই রফতানির বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড তাদের দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে এহেন শংসাপত্র দেয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে ভারত। ফলে দেশের দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার আমেরিকার কাছে খুলে দেওয়া ততটা সহজ নয়। বিরোধী থেকে শুরু করে পশুপালক সম্প্রদায়ের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে মোদী সরকারের উপর। এই পরিস্থিতিতে ভারতে আমেরিকার দুগ্ধজাত পণ্যের আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির চূড়ান্ত রূপ দিতে ভারতে আসার কথা ছিল মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজারের। তাঁর সেই নির্ধারিত সফরের মাত্র চার দিন আগে ওয়াশিংটন তা বাতিল করায় বহুচর্চিত বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ এইমুহূর্তে আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ট্রাম্পের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করবে নয়াদিল্লী। ফলে দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য বাজার না খুললেও, হারলে-ডেভিডসন বাইকের আমদানিতে শুল্ক কিছুটা কমাতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়াও, রয়েছে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু চুক্তি। ওয়াশিংটনে ‘আর্মস লবি’ বা ‘অস্ত্র ব্যবসায়ী’দের প্রতিপত্তির কথা সর্বজনবিদিত। ফলে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের আগে এহেন ভারতের অস্ত্র বাজারে প্রতিপত্তি বাড়াতে পারলে আখেরে লাভ হবে ট্রাম্পের। ফলে ট্রাম্পের ভারত সফরে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হোক বা না হোক, কূটনৈতিক ও কৌশলগত ক্ষেত্রে কোনোক্রমে সহযোগিতা বজায় রাখবেন দুই দেশেরই দুই রাষ্ট্রপ্রধান।