নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ভাই বোনেদের মধ্যে মেজদা শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে ছিল তাঁর অন্তরঙ্গতা। প্রথম থেকেই শরৎচন্দ্র বসু নেতাজীর বৈপ্লবিক চিন্তাধারাকে সমর্থন করতেন। দুজনের ব্যস্তময় জীবনেও জড়িয়ে থাকতো কিছু মজার মজার ঘটনা।
একবার খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় সুভাষচন্দ্র লিখেছেন “আমি বনকুসুম তৈল মাখিয়া দেখিলাম উহা অত্যন্ত উপকারী”। এই বিজ্ঞাপন দেখে শরৎচন্দ্র বসু তাঁকে ডেকে বলেন “সুভাষ তুই একটা কাজ কর। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে তোর আগের এবং এখনকার দুটো ছবি পাঠিয়ে দে, তাহলেই তেলের উপকারিতা বোঝা যাবে।” ছোটবেলায় নেতাজীর ঘন চুল থাকলেও পরে তা কমে গিয়েছিল।
আর একদিনের ঘটনা।
মিটিং-এ নেতাজীকে যেতে হবে দূরে ট্রেনে করে। সবাই তৈরী হয়ে আছেন কিন্তু নেতাজী যখন তৈরী হলেন তখন ট্রেন ছাড়তে বাকি মাত্র সাত মিনিট। এর পরে আর কোনো ট্রেন নেই। এই ট্রেন মিস করলে আর মিটিং এ যাওয়া হবে না। তখন কলকাতার জ্যাম না থাকলেও সাত মিনিটে এলগিন রোড থেকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছানো সম্ভব নয়। শেষমেশ শরৎচন্দ্র বসু হাওড়া স্টেশনে ফোন করে নানা কারণ দেখিয়ে ট্রেনটিকে আটকান। নেতাজীও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন।
গান্ধিজী কলকাতায় শরৎচন্দ্র বসুর বাড়ীতে উঠলে গান্ধিজীর অটোগ্রাফ নেবার জন্য সেখানে জমা পড়তো অনেক খাতা। প্রতি অটোগ্রাফের জন্য গান্ধিজী নিতেন ৫ টাকা। একদিন শরৎচন্দ্র বসু নেতাজীকে বলেন “তোরও টাকার খুব দরকার। তোর সইয়ের জন্য ২ টাকা নে না।” নেতাজী এর উত্তরে বলেন, “ওসব আমার দ্বারা হবে না”।
শরৎচন্দ্র বসু ছিলেন খ্যাতনামা আইনজীবী বলিষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের বিশিষ্ট নেতা। জানকীনাথ বসুর পুত্র ও সুভাষচন্দ্র বসুর মেজ দাদা শরৎচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৯ সালে ৬ই সেপ্টেম্বর কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও আইন ডিগ্রি নিয়ে কিছুকাল ওকালতি করেন। পরবর্তীতে তিনি ইংল্যান্ডে যান ব্যারিস্টারি পড়তে। ১৯১৮ সালে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনৈতিক জীবনাদর্শ নে আসেন। শুরু করেন নিঃস্বার্থভাবে দেশ সেবার কাজ। যেকোনো মূল্যে দেশকে পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করতে হবে। এর ফলে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার তাকে জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছিল। রাজনৈতিক জীবনে তিনি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য, নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় মহাসভার কার্যকারী সমিতির সদস্য, বঙ্গীয় কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা, কেন্দ্রীয় আইনসভার বিরোধী দলের নেতা এবং স্বাধীন ভারতের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলেন। নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের একটি উপনির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য পদের জন্য। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বিরোধিতা করে বাংলাকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস শরৎচন্দ্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান পার্টির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯৩৬ সালে তিনি বেঙ্গল কংগ্রেসের সভাপতি হন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা নিয়ে কংগ্রেসের ভূমিকা সম্পর্কিত ইস্যুতে তিনি ১৯৪৭ সালে তাঁর সদস্য পদ ত্যাগ করেন। একজন দেশপ্রেমিক বাঙালি হিসেবে শরৎচন্দ্র বসু বাংলা বিভাগের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি সমাজ ও ভাষার ভিত্তিতে গঠিত স্বশাসিত সমাজতান্ত্রিক রাজ্যের সমন্বয়ে একটি অখন্ড ভারত গঠনের পক্ষে ছিলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তাঁর চিন্তাধারার যথেষ্ট মিল ছিল। সোহরাওয়ার্দীও এ সময় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মিলিত স্বাধীন বাংলা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। উভয় নেতা পরবর্তী সময়ে একটি অখন্ড স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক হয়ে কাজ করেন।
শরৎচন্দ্র বসু ভারতীয় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের একজন নৈতিক সমর্থক ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হয়ে আদালতে বিনা পারিশ্রমিকে সওয়াল করতেন। তার স্ত্রী শ্রীমতি বিভাবতী বসুও গান্ধীবাদী আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগী ভূমিকা নেন।
২৩ শে আগস্ট ১৯৪৫ সাল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে মুকুট পালকের ভারতের শীর্ষ অবতরণ করেছেন। ঠিক সেই সময় জাপানের দোমেই সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী জানা যায় ১৮ ই আগস্ট তাইহোকুতে এক বিমান দুর্ঘটনায় ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একনিষ্ঠ বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র বসু গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।অবিভক্ত ভারতে এই খবর পরের দিন অর্থাৎ ২৪ শে আগস্ট সব কাগজের হেডলাইন এ ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মত। সারাদেশে নেমে আসে শোকের ছায়া, গোটা দেশ নির্বাক শোকস্তব্ধ। কিন্তু তখনও দেশের প্রত্যেকটা মানুষ এই খবরটা মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ও শোকস্তব্ধ হয়েছিলেন। শোনা যায় জহরলাল নেহেরু নাকি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। তবে যদিও বা তিনি কেঁদে থাকেন তা ছিল কুমিরের কান্না সেটা নিশ্চিত। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন “কেউ সুভাষের চিতা ভস্ম দেখলেও তিনি মানতে নারাজ সুভাষ মৃত”। এমনকি গান্ধীজীর পরিবারে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে লিখেছিলেন “নেতাজি শ্রাদ্ধ যেন না করা হয়”। নেতাজির পরিবার ও দেখা যায় তার মৃত্যুর সংবাদ মেনে নিতে পারেনি বিশেষত তার দাদা বিখ্যাত ব্যারিস্টার শরৎচন্দ্র বসু। কারণ হাজার ১৯৪২ সালে রয়টার্স মারফত একটি খবর এসেছিল সুভাষচন্দ্র বসু বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।যদি সেটি অসত্য বলে প্রমাণিত হয়।
শরৎচন্দ্র বসু ছিলেন একজন নিঃস্বার্থ দেশ প্রেমিক। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে বিপ্লবীদের পক্ষে আইনজীবী থাকাকালীন মামলায় বিপ্লবীদের শাস্তি হওয়ার আশঙ্কায় তাদের অস্ত্র সরবরাহ করে কারাগার থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন। তার চেতনা আর ধারনায় ছিল নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম। এই প্রেরণা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে “নেশন” নামের একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন ১৯৪৮ সালে। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো বিধানসভার সদস্য হিসাবে যোগদান দেওয়ার আগের দিন ১৯৫০ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি শরৎচন্দ্র বসু মারা যান।
তাঁর মৃত্যুতে ভারতের রাজনৈতিক আধারে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল তা পূরণ হবার ছিল না। তবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে শরৎচন্দ্র বসু নিঃস্বার্থ অবদানের কথা আজ তেমন কেউ মনে রাখেনি। তাঁকে ইতিহাস দেয়নি যথার্থ সম্মান।
স্বর্গীয় শরৎ চন্দ্র বসু বাংলার রাজনীতির এক বর্ণময় চরিত্র এবং এমন একজন রাজনীতিবিদ যিনি নিজের জীবদ্দশায় খ্যাতির শিরোনাম থেকে নিয়ে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা, সবটাই ভোগ করেছেন। অবশ্যই শরৎবাবুর রাজনৈতিক উত্থান এবং পতনের সাথে ওঁর ছোটভাই কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের সর্বোচ্চ স্তরের নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনীতি ওতপ্রোতঃভাবে জড়িত, পরবর্তীকালে আজাদ হিন্দ সরকারের নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের সাথে কিন্তু নয়। শরৎবাবুর পরিবারের বিভিন্ন প্রজন্ম এখনো সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে, বাংলাভাগের সাথে ওঁর সংযোগটির নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়নে কারো ব্যক্তিস্বার্থে আঘাত লাগতে পারে, কিন্তু এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য তা নয়। ব্যক্তি শরৎ বসু কেমন রাজনেতা ছিলেন, ভাই সুভাষচন্দ্রের রাজনীতিতে তাঁর কি ভুমিকা ছিল, অবিভক্ত বাংলায় কংগ্রেসে তাঁর অবদান কি, স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর উল্লেখযোগ্য যোগদান ইত্যাদি ছেড়ে দিয়ে, আমরা কেবল বাংলার বিভাজনের পটভূমিকায় শরৎ বসুর ঐতিহাসিক ভুমিকার দায়রায় নিজেদের সীমিত রাখবো। এই কাহিনী ১৯৪৫এ নেতাজীর শেষবার জনসমক্ষে আসার বছরদুয়েক পরের, দা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এবং নোয়াখালীর নরসংহারেরও পরের, সেই সময়টার, যখন মুসলিম লিগ দেশভাগের জন্য বদ্ধপরিকর, জিন্নার জয়ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে সুরাওয়ারদির শাসনের অধীনস্থ অবিভক্ত বাংলা।
৯ই অগাস্ট ১৯৪৬, বাংলার প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী প্রথমবার হুমকি দিয়েছিলেন যে উনি ভারত ভাগ করে স্বাধীন বাংলাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটা ডাইরেক্ট একশনের বেশ কিছু মাস আগেকার কথা। তারপর পাকিস্তানের দাবিতে রক্তগঙ্গা বয়ে গিয়েছিল কলকাতার রাজপথে এবং গ্রামবাংলায়, সে ইতিহাস আমরা সবাই জানি। হিন্দু মহাসভা উপায় খুঁজছিলেন বাংলার পাকিস্তান অন্তর্ভুক্তিকে এড়াবার, ১৯৪৭এর ২০শে ফেব্রুয়ারি সেই সুযোগ এসে গেল আর তাই পশ্চিমবাংলার ইতিহাসে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। কংগ্রেসের পাঞ্জাব ভাগের দাবিতে সম্মতির ইঙ্গিত পেয়েই ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হিন্দু মহাসভা এবং বাংলার হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের একটি বৃহদাংশ সেদিন বাংলাভাগেরও দাবি জানিয়ে বসলেন। স্বভাবতঃই বাধ সাধলেন সোহরাওয়ার্দী, তিনি সঙ্গে পেলেন বেশ কয়েকজন কংগ্রেসী হিন্দু নেতা সমেত কিরণ শঙ্কর রায় এবং শরৎ চন্দ্র বসুকে। তাঁদের অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানালেন তৎকালীন বাংলার গভর্নর ফ্রেড্রিক বারোস। ১২ই মার্চ ১৯৪৭ জিন্না বম্বেতে বিবৃতি দিয়ে জানালেন যে ভারত ভাগ করে পাকিস্থানকে মেনে নেওয়া ছাড়া ভারতের স্বাধীনতার অন্য কোন বিকল্প পথ নেই। এ বড় টালমাটাল সময়।
একদিকে দেখছি ডঃ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলাভাগের সমর্থনে সারা বাংলার হিন্দু সমাবেশ হচ্ছে আর অপরদিকে ১৯শে মার্চ ১৯৪৭এ গভর্নর বারোস এক চিঠিতে লিখছেন,
“The movement for partitioning Bengal is gathering momentum. Hindu opinion is at present very divided. For once Sarat Bose and Gandhi see eye to eye, and both condemn the movement, of which Syamaprasad Mookherjee and the Hindu Mahasabha are the chief protagonists.”
অর্থাৎ বাংলাভাগের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন যুক্তবঙ্গের দাবিতে মুসলিম লিগ, মহাত্মা গান্ধী, বাংলা কংগ্রেসের একাংশ এবং কংগ্রেসের সাথে বিস্তর অন্য মতান্তর থাকা সত্ত্বেও শরৎ চন্দ্র বসু , সবাই একজোট হয়ে গিয়েছেন ততক্ষণে। ১৯৪৭ এর ২৬শে এপ্রিল জিন্না এবং সোহরাওয়ার্দী একইদিনে আলাদা আলাদা সময়ে বড়লাট লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন দিল্লিতে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই বৈঠকে সোহরাওয়ার্দী বড়লাটকে বললেন উনি জিন্নাকে স্বাধীন বঙ্গদেশ মেনে নিতে রাজি করাতে পারবেন এবং একদম স্ক্রিপ্ট মেনে পরের বৈঠকেই জিন্না বললেন,
“What is the use of Bengal without Calcutta; they had much better remain united and independent; I am sure that they would be on friendly terms with us.”
তারপরের দিনই, অর্থাৎ ২৭শে এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী অভিভক্ত স্বাধীন বাংলার জন্য জোর সওয়াল করলেন প্রেসে আর সেই সূত্র ধরে ২২শে মে হিন্দুনিধনের প্রেক্ষিতকে উপেক্ষা করা শরৎ বসু এবং হিন্দু নিধনকারী দাঙ্গার সমর্থক ও বর্ধমানের মুসলিম লিগ নেতা আবুল হাশিম প্রেস কনফারেন্স ডেকে পেশ করে দিলেন অভিভক্ত স্বাধীন বাংলার সংবিধানের মূল সূত্রগুলি। শরৎবাবু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মুসলমানপ্রধান স্বাধীন বঙ্গভূমির সংবিধান রচনার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। উনি প্রেসকে জানালেন যে সেই দেশে সংবিধান সমিতির ৩০জন সদস্য থাকবেন যার মধ্যে ১৬ জন মুসলমান এবং ১৪ জন হিন্দু, মন্ত্রিত্বে হিন্দু এবং মুসলমান মন্ত্রী থাকবেন সমসংখ্যক, প্রধানমন্ত্রী হবেন মুসলমান এবং গৃহমন্ত্রী হিন্দু। আর স্বাধীন বঙ্গভূমির সরকারি সহায়তার ওপর মুসলমানদের নিরবিচ্ছিন্ন অধিকার থাকবে।
শরৎবাবু মনেপ্রাণে সমাজতান্ত্রিক ছিলেন, উনি বিশ্বাস করতেন যে স্বাধীন অবিভক্ত বঙ্গভূমি হবে একটি সোশ্যালিস্ট রিপাব্লিক, যার রাজনীতিতে তাঁর এক অগ্রণী ভুমিকা থাকবে। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। আজ শরৎচন্দ্র বসুর স্মৃতি বলতে, কলকাতা হাইকোর্টের সামনে তাঁর একটি মূর্তি এবং কলকাতার একটি মুখ্য রাস্তা, আর নেতাজিকে নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থে তাঁর উল্লেখ, এছাড়া তিনি হারিয়ে গিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়।
(তথ্যসূত্র:
১- Brothers Against the Raj: A Biography of Indian Nationalists Sarat and Subhas Chandra Bose, Leonard a Gordon, Rupa & Co (২০১৫)।
২- Sarat Chandra Bose: Remembering my father, Sisir Kumar Bose, Niyogi Books (২০১৩)।
৩- A daughter remembers life and times of Sarat Chandra Bose, Chitra Ghosh, Abhijeet Publications (২০১১)।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত