রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল পুরভোটের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কিন্তু এখনও গেরুয়া শিবিরে পুরভোট নিয়ে তৎপরতা নেই। কলকাতা-সহ কোনও পুরসভার ভোটেই তাদের কোনও ‘মুখ’ থাকছে না। দলের সাংগঠনিক নির্বাচন সদ্য শেষ হয়েছে। কিন্তু রাজ্য এবং জেলাগুলির কমিটি তৈরি হয়নি। ফলে কারা কমিটিতে থাকবেন এবং কারা বাদ পড়বেন, তা নিয়েই রাজ্য ও জেলা নেতারা চিন্তিত। এই পরিস্থিতিতে মাইক-বিধির ধুয়ো তুলে কলকাতা, হাওড়ায় পুরভোট পিছিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি।
এপ্রিলের মাঝামাঝি এই দুই পুরসভায় ভোট করানোর পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে ঘোর আপত্তি বিজেপির। তাদের যুক্তি, সরকারের পরিকল্পনামাফিক ভোট হলে মাইক বাজিয়ে প্রচারের জন্য মাত্র বারো দিন হাতে পাওয়া যাবে। কেননা, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে ৩০ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ। তাই ভোট পিছোনোর দাবি নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনে দরবার করতে চলেছেন বিজেপি নেতারা। সূত্রের খবর, কমিশনের সিদ্ধান্ত মনের মতো না হলে আদালতের দ্বারস্থ হতেও পিছপা হবেন না তাঁরা।
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেও বিজেপি নেতারা জোর গলায় দাবি করছিলেন, যে সময়েই পুরভোট হোক, তাঁরা প্রস্তুত। কিন্তু ১২ এপ্রিল কলকাতা-হাওড়ায় পুরভোটের ইঙ্গিত পাওয়া ইস্তক নড়েচড়ে বসেছেন তাঁরা। দলের অন্দরের খবর, এই দুই পুর-এলাকায় সাংগঠনিক হাল রীতিমতো নড়বড়ে। এমনকী গোটা রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন শেষ হলেও কলকাতায় নড়বড়ে সংগঠনের কারণে সে পথে হাঁটার ঝুঁকিও নিতে পারেননি দিলীপ ঘোষরা। এই অবস্থায় পুরভোট হলে নাস্তানাবুদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপরন্তু এ রাজ্য-সহ গোটা দেশে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর বিরোধী আন্দোলন, দিল্লীর ভোটের পরাজয়ে বিজেপিকে এখন কিছুটা কোণঠাসা। কলকাতায় দলের সদস্য সংগ্রহ এতই কম হয়েছে যে, সেখানে চারটি সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি নির্বাচন করতে পারেনি তারা। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার অজুহাতে পুরভোট পিছিয়ে দিয়ে ঘর গোছানোর জন্য বাড়তি সময় চাইছে বিজেপি। তাই যেভাবেই হোক পুরভোট পিছোতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যদিও বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘মাইক নিয়ে আদালতের নির্দিষ্ট রায় আছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে ভোট প্রচারের জন্য অন্তত ২৫ দিন সময় দিতে হবে। মাইক বাজাতে না পারলে প্রচার কী করে হবে! তাই আমরা কমিশনের কাছে দাবি জানাব, পরীক্ষার মরসুমে ভোট না ফেলতে। এর সঙ্গে দলীয় সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই।’
তবে উত্তর কলকাতার এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কলকাতার ৬০টি ওয়ার্ড রয়েছে। লোকসভায় আমরা ১৯টি ওয়ার্ডে লিড নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন ভোট হলে পাঁচটাতেও জিততে পারব না।’ দক্ষিণ কলকাতার এক বিজেপি নেতার উপলব্ধি, ‘ভোট-প্রচারের কথা পরে ভাবা যাবে। আপাতত সংগঠন মজবুত করার জন্য আমাদের এক মাস প্রয়োজন। ১২ এপ্রিল ভোট হলে আমাদের ভরাডুবি হবে। রাজ্য নেতৃত্বকে সেটা আমরা জানিয়েও দিয়েছি।’