সরকারের অন্দরের দুর্নীতি ধরাই যাদের প্রধান কাজ, এবার সেই ভিজিল্যান্স কমিশনের মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার বা সিভিসি নিয়োগ নিয়ে নিয়োগ নিয়ে এক নজিরবিহীন ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী হল দেশ। সার্চ কমিটির অন্যতম সদস্য তথা বর্তমান অর্থসচিব রাজীব কুমারকে পরবর্তী সিভিসি নিয়োগের প্রয়াসে বিতর্কের শুরু। আর বিতর্কের দ্বিতীয় অঙ্কে হয় আরও বড় নাটক। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বৈঠকে উচ্চ বাদানুবাদের পর রাজীব কুমারের নাম বাদ যায় বটে কিন্তু কার্যত আকাশ থেকে পড়ে আরও একটি নাম, তিনি সঞ্জয় কোঠারি।
প্রসঙ্গত, ভিজিল্যান্স কমিশনারের প্রধান কাজ হল সরকারের অন্দরের দুর্নীতি ধরা। সরকারি কাজে কোনও দুর্নীতি বা অনৈতিকতার অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করবে ভিজিল্যান্স বিভাগ। সেই বিভাগের প্রধান চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার বা সিভিসি। আর এই মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার বা সিভিসি নিয়োগ নিয়েই সমস্যার সূত্রপাত। নিয়ম অনুযায়ী সিভিসি ও ভিসি বাছাই করবে কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি। সেই সার্চ কমিটির সুপারিশ পৌঁছবে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কাছে।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং লোকসভায় সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের নেতা। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি সার্চ কমিটির সুপারিশ থেকে একটি নাম বেছে নেবে। তবে সার্চ কমিটির সুপারিশেই মূল সমস্যা। কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বের সার্চ কমিটির একজন অন্যতম সদস্য ছিলেন অর্থসচিব রাজীব কুমার। ক’দিন আগেই তিনি সেই কমিটি থেকে ইস্তফা দেন। তারপরই দেখা যায় রাজীব কুমারের নাম উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির কাছে সিভিসি হিসেবে সুপারিশ করে পাঠিয়েছে সার্চ কমিটি।
আর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির বৈঠকে এ নিয়েই তীব্র আপত্তি তোলেন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী। অমিত শাহ রাজীব কুমারের নাম করা মাত্রই যখন তার বিরোধিতা করেন অধীর, তখন বাধ্য হয়েই বহরমপুরের সাংসদের যুক্তি মেনে নেন মোদী। তারপর নিজের ট্যাঁক থেকে বের করেন সঞ্জয় কোঠারির নাম। ঘটনাপ্রবাহের আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যান অধীর। কারণ বর্তমানে এই আইএএস অফিসার রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সেক্রেটারি পদে থাকা সঞ্জয় কোঠারি নিজে এই পদের জন্য কোনও আবেদনই করেননি।
তবে যেহেতু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির তিন সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্থাৎ ২ জন যে দিকে মত দেবেন, তিনিই দায়িত্ব পাবেন। তাই এক্ষেত্রে মোদীর সুপারিশ সঞ্জয় কোঠারির নামে সমর্থন দিয়েছেন শাহ। আর এর ফলে স্বভাবতই দেশের পরবর্তী সিভিসি হতে চলেছেন কোঠারি। তবে বিরোধীদের আপত্তি রয়েছে অনেক জায়গায়। প্রথমত, সার্চ কমিটির সদস্য নিজে কীভাবে সিভিসি পদের জন্য আবেদন করেন? দ্বিতীয়ত, প্রতিবাদের মুখে সেই আবেদন বাতিল হলে কীভাবে নিয়মের তোয়াক্কা না করে পদের জন্য আবেদন না করা একজনকে সেই পদের মনোনয়ন দেওয়া হয়? আসলে কোন দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে এত মরিয়া হয়ে উঠেছেন মোদী যে নিয়ম-কানুনের অবধি তোয়াক্কা করছেন না! এমনটাই দাবি বিরোধীদের।