‘ফ্যাসিবাদী শক্তি আসামে বাঙালি নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে’- আসামে বাঙালিদের ভোগান্তি দেখে বারবারই এই অভিযোগ উঠেছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে৷ ইতিমধ্যেই লাখ দুয়েক বাঙালি নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। জেল খাটছেন ৯৮৮ জন। ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। তবে প্রয়োজনীয় নথি থাকলেও কিন্তু আসামের বাঙালিদের সেই চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। যেমন জাবেদা বেগম।
আসামের প্রত্যন্ত এলাকা বাকসায় থাকেন জাবেদা। গুয়াহাটি থেকে সেখানকার দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। ৫০ বছর বয়সী জাবেদাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করেছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু নিজেকে ভারতীয় প্রমাণের জন্য সবরকম চেষ্টাই করছেন তিনি। গুয়াহাটি হাইকোর্ট অবধিও গিয়েছিলেন। তবে সেখানে খারিজ হয়ে গিয়েছে তাঁর দাবি। এবার দিল্লীতে গিয়ে যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন, এমন সঙ্গতি তাঁর নেই।
জাবেদার স্বামী রেজাক আলি দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছেন। তাঁদের তিনটি মেয়ে ছিল। একজন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। আর একজন নিখোঁজ। সবচেয়ে ছোট যে মেয়ে, তার নাম আসমিনা। পড়ে ক্লাস ফাইভে। তাঁকে নিয়েই চিন্তায় আছেন জাবেদা। মামলা করতে গিয়ে তাঁদের সঞ্চয় শেষ। বেশিরভাগ দিনেই সেই শিশুকন্যার রাতের খাওয়া জোটে না। জাবেদা বলেন, ‘আমি আশা হারিয়ে ফেলেছি। আমি না থাকলে মেয়েটার কী হবে, তা নিয়েই চিন্তা।’
জাবেদার গ্রামের নাম গোয়াবাড়ি। ২০১৮ সালে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে বিদেশি ঘোষণা করে। একবছর ধরে তিনি ট্রাইব্যুনালে যাতায়াত করেছেন। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তিনি ভারতীয়। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যে নথিপত্র দিতে বলা হয়েছিল, অর্থাৎ ভূমি রাজস্ব সংক্রান্ত নথি, ব্যাঙ্কের নথিপত্র, প্যান কার্ড, সব জমা দিয়েছেন। তবু তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণ হয়নি।
ট্রাইব্যুনালে তিনি ১৯৬৬, ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালের ভোটার লিস্ট পেশ করে দেখিয়েছিলেন, সেখানে তাঁর বাবা জাবেদ আলির নাম আছে। ট্রাইব্যুনাল বলেছে, তিনি যে জাবেদ আলিরই মেয়ে, তার প্রমাণ কী? জাবেদার বার্থ সার্টিফিকেট নেই। তিনি গ্রামপ্রধানের দেওয়া একটা সার্টিফিকেট এনেছিলেন। তাতে তাঁর বাবা-মায়ের নাম ও জন্মস্থান উল্লেখ করা আছে। তাও ফিরিয়ে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তবে শুধু জাবেদা বিবিই নন, গোটা আসামে তাঁর মত অনেকেরই অবস্থা এমন শোচনীয়।