কাঁকড় মাড়িয়ে ধুলো পায়ে একসময়ে চষেছেন গোটা জঙ্গলমহল। জননেত্রী তিনি। আদিবাসী— কোল, ভিল, সাঁওতাল, আর্থিকভাবে পিছিয়ে–পড়া মানুষের দুঃখ–দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেছিলেন তখনই, আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও ভোলেননি জঙ্গলমহলের আপাতভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর কথা। তাই প্রায় গোটা বছর ধরেই জঙ্গলমহলের জন্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন মমতা। যার মধ্যে অন্যতম জঙ্গলমহল বিশ্ববিদ্যালয়। যেন তাঁরই ‘স্বপ্ন’–এর স্বীকৃতি। যে আদিবাসী মানুষদের উন্নয়ন তাঁর কাজের তালিকায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে, সেই ভাবনাকেই পুরস্কৃত করছে জঙ্গলমহলের একটি শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জঙ্গলমহল স্বীকৃতি’ সম্মান দিচ্ছে পুরুলিয়ার সিধো–কানহো–বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়। আসন্ন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ওই সম্মাননা তুলে দেওযা হবে মমতার হাতে। ইতিমধ্যে এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে লিখিতভাবে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
পুরুলিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি কমিটিতে ঠিক হয়েছে ৩ মার্চ সমাবর্তনের সম্ভাব্য দিন। কিন্তু সিধো–কানহো–বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান প্রদানের দিন মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকতে পারবেন না। তাঁর বদলে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন বলে চিঠিতে জানিয়েছেন মমতা স্বয়ং। মঙ্গলবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. দীপককুমার করকে একটি চিঠিতে মমতা প্রত্যুত্তরে তাঁর ভাল লাগার কথা জানিয়েছেন। মমতা বলেছেন, ‘আপনার বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ‘জঙ্গলমহল স্বীকৃতি’ সম্মান দিতে চায় জেনে আমি খুব খুশি। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও পূর্বনির্ধারিত ব্যস্ততার কারণে এবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাওয়া সম্ভব হবে না।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি না থাকলেও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে আমি অনুরোধ করব।’ একই সঙ্গে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও যাঁরা সম্মানিত হবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র–ছাত্রী, শিক্ষক–শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘অনুষ্ঠানের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি। আমি নিশ্চয় পরে কোনও সময়ে আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব।’
বেলপাহাড়ির জঙ্গলঘেরা গ্রামে গিয়ে বিরোধী মমতা সেবার দেখেছিলেন কীভাবে দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষ শালপাতায় শুঁয়োপোকা, পোকামাকড়ে ক্ষুন্নিবৃত্তি করে! অন্তত দেড়–দুই যুগ আগের সেই জঙ্গলমহলে এখন আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা সর্বাগ্রে আদিবাসী–অধ্যুষিত এলাকার উন্নতিতে নজর দেন। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গে আদিবাসীদের জল–জঙ্গল–জমিনের লড়াই, উন্নয়নের ছোঁয়াতে বদলে যায় তাঁদের জনজীবনও। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, পানীয় জলের ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ বনভূমি ঘিরে ওইসব গ্রামে গেলে তা চোখে পড়ে। যে জঙ্গলমহলের জন্যে এত কিছু করেছেন মমতা, সেই জঙ্গলমহলই এবার মমতার ঋণ কিছুটা শোধ করার চেষ্টা করল।