মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই কেন্দ্রীয় নীতির জেরে দেশের অর্থনীতিতে গভীর মন্দা ও নীতি-পঙ্গুত্ব দেখা দিয়েছে। শিল্পে খরা। নগদ টাকার জোগান নেই। জিডিপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু এই সঙ্কটের সময়েও একেবারে উল্টোদিকে বইছে এ রাজ্যের হাওয়া। দেশের গড় উৎপাদনের সূচক যখন ৫ ছুঁতে কষ্ট হচ্ছে, তখন বাংলার উৎপাদনের সূচক ১০ ছুঁতে চলেছে। সোমবার বিধানসভায় অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বিলের আলোচনায় এমনটা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। একই সঙ্গে গতকাল ফিনান্স বিল ২০২০ সর্বসম্মতভাবেই পাশ হয়েছে বিধানসভায়। দুটি বিলের আলোচনায় অংশ নিয়েছেন সুখবিলাস বর্মা, সমীর চক্রবর্তী, আলি ইমরান রমজ, শীলভদ্র দত্ত, বিশ্বনাথ চৌধুরি, জ্যোতির্ময় কর, নির্মল ঘোষ, অশোক ভট্টাচার্য।
বিরোধীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে অমিত মিত্র বলেন, দেশের জিডিপি গ্রোথ এখন ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিনিয়োগ ১৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ১৫ বছরের মধ্যে এত কম বিনিয়োগ কখনও হয়নি। অথচ মূল্যবৃদ্ধি গত ৬৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে জীবনবিমার নন পারফর্মিং অ্যাসেট ছিল ১১ হাজার কোটি। এখন তা ৩০ হাজার কোটি। জীবনবিমার মতো সংস্থাকে জোর করে অলাভজনক শেয়ার কিনিয়ে কিনিয়ে লোকসানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। যাতে বেচে দেওয়া যায়। এইভাবে গোটা দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে, সেখানে একটি রাজ্য কীভাবে গড় উৎপাদন বাড়াচ্ছে? এটাই তো প্রশ্ন বিরোধীদের?
অমিত মিত্র বলেন, এর তিনটি কারণ। আমরা প্রচুর সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু রেখেছি। ফলে গরিব মানুষের হাতে টাকা আছে। কেন্দ্র কর্পোরেট কর কমিয়েছে, ফলে কর্পোরেটের লাভ বেড়েছে। কিন্তু সে টাকা বাজারে আসছে না। আমরা কৃষক-শ্রমিকের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়াতে পেরেছি বলেই গড় উৎপাদন বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, এ রাজ্যের ক্যাপিটাল আউটলেট ১৪ গুণ বাড়িয়েছি। পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে। তৃতীয়ত, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে প্রচুর। শুধু বানতলাতেই এবার ৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। কল্যাণীতে লজিস্টিক হাব হচ্ছে। বিনিয়োগ হবে ১ হাজার কোটি টাকা। ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতে চলেছে। টিসিএস নিউ টাউনে জমি নিয়েছে। প্রকল্প শেষ হলে সেখানে ১৫ হাজার ছেলেমেয়ে কাজ পাবে।
অমিত মিত্র জানিয়েছেন, রাজ্য থেকে কেন্দ্রের সংগৃহীত করের ৪২ শতাংশ রাজ্যকে দেওয়ার কথা। সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে দিয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। সেস সারচার্জে হাত দিতে পারে না রাজ্য। তাই সেস ও সারচার্জের পরিমাণ ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পেও ৩৭,৯৭৩ কোটি টাকা বকেয়া। তবু রাজ্য এগিয়ে চলেছে। যে ফিনান্স বিল পাশ হল, তার ফলে এ রাজ্যের ২৫ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-সহ ৪০ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন। এভাবেই রাজ্যের গড় উৎপাদন বাড়াচ্ছি আমরা। রাজ্যের মমতা সরকার যে প্রতিমুহূর্তে এভাবেই রাজ্যের উন্নয়ন কাজকে আরও ত্বরান্বিত করে চলেছেন, সে কথাও বলতে ভোলেননি অর্থমন্ত্রী।